খণ্ডগিরি দেখার পর গাড়ি ছেড়ে দিল। জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি পথ দিয়ে গাড়ি চলতে লাগল। বিক্রম ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করল," ধৌলি পৌঁছতে কত সময় লাগবে ?"
ড্রাইভার সামনের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিল, "চল্লিশ মিনিট মতো। ওখান থেকে কোনার্ক হয়ে স্বর্গদ্বার। হোটেলে পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। কোনার্ক যাবার পথেই লাঞ্চ করে নেবেন।"
গাড়ি চলতে লাগল পাহাড়ি পথে। অঘোরবাবু তার ব্যাগ হতে দুটো লস্যির প্যাকেট বের করলেন। " উদয়গিরিতে কিনেছি। খেয়ে দেখুন মশাই। এতদিন তো অন্যকে ঘোল খাওয়ালেন এবার নিজে খেয়ে দেখুন। আমার মনে হয় না ওরা আমাদের এত সহজে ছেড়ে দেবে। "
বিক্রম গম্ভীর হয়ে গেল। কিছু একটা ভাবনা বিক্রমকে ক্ষণিকের মধ্যে অবসন্ন করে তুলেছে। সে গাড়ির সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলল, "যবে থেকে জন্মেছি শুধু ঘোলই খেয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অঘোরবাবু ঘোল কি শুধুমাত্র খাওয়াই যায় ? - আমাদের মাথায় কেউ ঘোল ঢালছে না তো ? "
অঘোরবাবু ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন বিক্রমের দিকে, তারপর বললেন, "ঠিক বুঝলাম না বিক্রমবাবু।"
বিক্রম বলল, " কয়েকটা প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছে, উত্তর পাইনি। যেমন ধরুন, মল্লদেবনের লুকিয়ে রাখা সম্পদের খোঁজ করছে কারা ? স্বর্গদ্বারের একটা অখ্যাত হোটেলের সঙ্গে কি সম্পর্ক এই গুপ্তধনের ? আর আমরা যে ছদ্মবেশে উদয়গিরি যাচ্ছি সেটা আততায়িরা জানল কিভাবে ? "
অঘোরবাবু বললেন," ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। কিন্তু আপনি ওই গুহাতে এত তন্ময় হয়ে কি দেখেছিলেন মশাই ? ওইসব হিজিবিজি লেখাগুলো কি এমন ইম্পরট্যান্ট মশাই ? "
বিক্রম হেঁসে বলল," কুছ নেহি পুরা ডাল কালা হ্যায়। আর ওই লেখাগুলো কি জানেন, - গুপ্তধনের চাবি। এই শিলালিপি অনুসারে কোন এক ব্যক্তি বলছে যে
মহারাজধীরাজ চক্রবর্তীসম্রাট অনন্ত পদ্মণাভনের বিশ্বস্ত সেবক শ্রীমান মল্লদেবন দেববর্মন
রাজার নির্দেশে এক গোযানপূর্ণ ধনরাশি শত্রুহস্তহতে দূরে নিরাপদে রাখার বন্দোবস্ত করেছেন।
বরুণদেবের উপস্থিততিতে নিলাচল.......
তার পরের অংশ আর নেই। কালের হস্তক্ষেপে মুছে গেছে বহুবছর আগেই। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এতসব কাণ্ডের মূলে কি। তবে এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তরই পাওয়া যায় নি। অঘোরবাবু, আমাদের কাজ হবে হোটেলের ভৌতিক ব্যাপার আর এই মল্লদেবনের গুপ্তধনের সম্পর্ক বের করা। "
অঘোরবাবু গালে হাত দিয়ে বিক্রমের দিকে তাকিয়ে রইলেন, তার মুখে কোন কথা সরলো না। আর তখনই বিক্রমের মোবাইলটা বেজে উঠল।
" হ্যালো, কে বলছেন ? "
.............
" হ্যাঁ , বলুন.. "
.............
বিক্রম ফোনটা কেটে দিয়ে বলল," লোকটার জ্ঞান ফিরেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে ওর নাম পরমেশ ভোই , ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিতে জড়িয়ে পড়েছে বহুদিন। দু'দুবার জেলও খেটেছে পরমেশ । ধৌলি থেকে ফিরে একবার লোকটাকে দেখে আসতে হবে। ওই হতে পারে আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।"
- - -চার - - - -
ধৌলি দেখে ফেরার পথে বিক্রম হসপিটালে নামল। পরমেশ ভোই যে রুমে ভর্তি আছে সেই রুমের সামনে একজন উর্দিপরা পুলিশ পাহারায় রয়েছে । বিক্রমকে দেখে সে সেলুট করে বলল," বড়বাবু আপনার কথা বলে গিয়েছেন। ভেতরে যান, কোন সমস্যা হলে ডাকবেন।"
রুমে ঢুকে বিক্রম দেখল পরমেশ বিছানায় শুয়ে আছে, মাথায় তার বিশাল ব্যান্ডেজ বাঁধা। তার খাটের পাশে চেয়ারে বসে একজন খাঁকি পোষাকের পুলিশ। বিক্রম ইশারা করতেই পুলিশটি বাইরে চলে গেল। অঘোরবাবু বললেন," এটা ঠিক করলেন না মশাই। পুলিশ থাকলে এই মর্কটটা একটু চাপে থাকত।"
বিক্রম অঘোরবাবুর কথায় একটু হাঁসল। এরপর চেয়ারটা টেনে নিয়ে পরমেশের কাছে বসল। বিক্রম জিজ্ঞাসা করল, " এখন কেমন বোধ করছ ?"
- ভালো।
- আমাকে মারতে গিয়েছিলে কেন ?
- আমি জানি না।
- বললে তোমারই মঙ্গল। এ কেসে জামিন পাবার আশা কম। আমাকে মারার চেষ্টা, হোটেলের খুন এই সব অপরাধের চার্জ তোমার উপরই বর্তাবে। সামান্য ক'টা টাকার জন্য কেন জেলে পচে মরবে ? রাজসাক্ষী হয়ে যাও তোমার যাতে কিছু না হয় সে দায়িত্ব আমার।
-আমাকে ওরা মেরে ফেলবে স্যার !
- তোমার নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের, তুমি নির্দিধায় সবকিছু খুলে বল।
- আমাদের যিনি বস আমি তার মুখ দেখিনি কোনোদিন, সবাই তাকে গুরু বলে । উনার মুখ সবসময় ঢাকা থাকে। উনার কথার অবাধ্য হলে মৃত্যু অনিবার্য। আমাদের দলে কাজ করত একজন কলকাতার লোক, লোকটা ওখানকারই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতত্ত্বের অধ্যাপক ছিল। গুরু আমাকে ডেকে বললেন যে লোকটা নাকি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ওকে মেরে ফেলতে হবে।
- তারপর.... মেরে ফেললে ?
- আমি নয়, রঘু। রঘু ওদের খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল।
- বিষ মানে মাছের বিষ ?
- "হ্যাঁ । গুরু এনে দিয়েছিল মাছটা। বিদেশী মাছ। রঘু কেবল ঐ মাছটার কারি বানিয়েছিল। রঘুও চেয়েছিল আপনাকে সবকিছু জানাতে। বস ওকে গুলি করে মেরেছে। আমার কি হবে স্যার ! " পরমেশ ডুকরে কেঁদে ওঠে।
ড্রাইভার সামনের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিল, "চল্লিশ মিনিট মতো। ওখান থেকে কোনার্ক হয়ে স্বর্গদ্বার। হোটেলে পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। কোনার্ক যাবার পথেই লাঞ্চ করে নেবেন।"
গাড়ি চলতে লাগল পাহাড়ি পথে। অঘোরবাবু তার ব্যাগ হতে দুটো লস্যির প্যাকেট বের করলেন। " উদয়গিরিতে কিনেছি। খেয়ে দেখুন মশাই। এতদিন তো অন্যকে ঘোল খাওয়ালেন এবার নিজে খেয়ে দেখুন। আমার মনে হয় না ওরা আমাদের এত সহজে ছেড়ে দেবে। "
বিক্রম গম্ভীর হয়ে গেল। কিছু একটা ভাবনা বিক্রমকে ক্ষণিকের মধ্যে অবসন্ন করে তুলেছে। সে গাড়ির সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলল, "যবে থেকে জন্মেছি শুধু ঘোলই খেয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অঘোরবাবু ঘোল কি শুধুমাত্র খাওয়াই যায় ? - আমাদের মাথায় কেউ ঘোল ঢালছে না তো ? "
অঘোরবাবু ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন বিক্রমের দিকে, তারপর বললেন, "ঠিক বুঝলাম না বিক্রমবাবু।"
বিক্রম বলল, " কয়েকটা প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছে, উত্তর পাইনি। যেমন ধরুন, মল্লদেবনের লুকিয়ে রাখা সম্পদের খোঁজ করছে কারা ? স্বর্গদ্বারের একটা অখ্যাত হোটেলের সঙ্গে কি সম্পর্ক এই গুপ্তধনের ? আর আমরা যে ছদ্মবেশে উদয়গিরি যাচ্ছি সেটা আততায়িরা জানল কিভাবে ? "
অঘোরবাবু বললেন," ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। কিন্তু আপনি ওই গুহাতে এত তন্ময় হয়ে কি দেখেছিলেন মশাই ? ওইসব হিজিবিজি লেখাগুলো কি এমন ইম্পরট্যান্ট মশাই ? "
বিক্রম হেঁসে বলল," কুছ নেহি পুরা ডাল কালা হ্যায়। আর ওই লেখাগুলো কি জানেন, - গুপ্তধনের চাবি। এই শিলালিপি অনুসারে কোন এক ব্যক্তি বলছে যে
মহারাজধীরাজ চক্রবর্তীসম্রাট অনন্ত পদ্মণাভনের বিশ্বস্ত সেবক শ্রীমান মল্লদেবন দেববর্মন
রাজার নির্দেশে এক গোযানপূর্ণ ধনরাশি শত্রুহস্তহতে দূরে নিরাপদে রাখার বন্দোবস্ত করেছেন।
বরুণদেবের উপস্থিততিতে নিলাচল.......
তার পরের অংশ আর নেই। কালের হস্তক্ষেপে মুছে গেছে বহুবছর আগেই। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এতসব কাণ্ডের মূলে কি। তবে এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তরই পাওয়া যায় নি। অঘোরবাবু, আমাদের কাজ হবে হোটেলের ভৌতিক ব্যাপার আর এই মল্লদেবনের গুপ্তধনের সম্পর্ক বের করা। "
অঘোরবাবু গালে হাত দিয়ে বিক্রমের দিকে তাকিয়ে রইলেন, তার মুখে কোন কথা সরলো না। আর তখনই বিক্রমের মোবাইলটা বেজে উঠল।
" হ্যালো, কে বলছেন ? "
.............
" হ্যাঁ , বলুন.. "
.............
বিক্রম ফোনটা কেটে দিয়ে বলল," লোকটার জ্ঞান ফিরেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে ওর নাম পরমেশ ভোই , ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিতে জড়িয়ে পড়েছে বহুদিন। দু'দুবার জেলও খেটেছে পরমেশ । ধৌলি থেকে ফিরে একবার লোকটাকে দেখে আসতে হবে। ওই হতে পারে আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।"
- - -চার - - - -
ধৌলি দেখে ফেরার পথে বিক্রম হসপিটালে নামল। পরমেশ ভোই যে রুমে ভর্তি আছে সেই রুমের সামনে একজন উর্দিপরা পুলিশ পাহারায় রয়েছে । বিক্রমকে দেখে সে সেলুট করে বলল," বড়বাবু আপনার কথা বলে গিয়েছেন। ভেতরে যান, কোন সমস্যা হলে ডাকবেন।"
রুমে ঢুকে বিক্রম দেখল পরমেশ বিছানায় শুয়ে আছে, মাথায় তার বিশাল ব্যান্ডেজ বাঁধা। তার খাটের পাশে চেয়ারে বসে একজন খাঁকি পোষাকের পুলিশ। বিক্রম ইশারা করতেই পুলিশটি বাইরে চলে গেল। অঘোরবাবু বললেন," এটা ঠিক করলেন না মশাই। পুলিশ থাকলে এই মর্কটটা একটু চাপে থাকত।"
বিক্রম অঘোরবাবুর কথায় একটু হাঁসল। এরপর চেয়ারটা টেনে নিয়ে পরমেশের কাছে বসল। বিক্রম জিজ্ঞাসা করল, " এখন কেমন বোধ করছ ?"
- ভালো।
- আমাকে মারতে গিয়েছিলে কেন ?
- আমি জানি না।
- বললে তোমারই মঙ্গল। এ কেসে জামিন পাবার আশা কম। আমাকে মারার চেষ্টা, হোটেলের খুন এই সব অপরাধের চার্জ তোমার উপরই বর্তাবে। সামান্য ক'টা টাকার জন্য কেন জেলে পচে মরবে ? রাজসাক্ষী হয়ে যাও তোমার যাতে কিছু না হয় সে দায়িত্ব আমার।
-আমাকে ওরা মেরে ফেলবে স্যার !
- তোমার নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের, তুমি নির্দিধায় সবকিছু খুলে বল।
- আমাদের যিনি বস আমি তার মুখ দেখিনি কোনোদিন, সবাই তাকে গুরু বলে । উনার মুখ সবসময় ঢাকা থাকে। উনার কথার অবাধ্য হলে মৃত্যু অনিবার্য। আমাদের দলে কাজ করত একজন কলকাতার লোক, লোকটা ওখানকারই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতত্ত্বের অধ্যাপক ছিল। গুরু আমাকে ডেকে বললেন যে লোকটা নাকি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ওকে মেরে ফেলতে হবে।
- তারপর.... মেরে ফেললে ?
- আমি নয়, রঘু। রঘু ওদের খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল।
- বিষ মানে মাছের বিষ ?
- "হ্যাঁ । গুরু এনে দিয়েছিল মাছটা। বিদেশী মাছ। রঘু কেবল ঐ মাছটার কারি বানিয়েছিল। রঘুও চেয়েছিল আপনাকে সবকিছু জানাতে। বস ওকে গুলি করে মেরেছে। আমার কি হবে স্যার ! " পরমেশ ডুকরে কেঁদে ওঠে।
No comments:
Post a Comment