১৮ই এপ্রিল
আজ সকাল সকাল ট্রেনে উঠে বসেছি। কপাল ভালো সিট পেয়েছি। জানালার ধারের সিটে মুখে ওড়না ঢাকা নিয়ে দিব্যি সুখনিদ্রা দিচ্ছেন এক তরুণী। তার পাশের সিটটা আমার। দেখতে দেখতে গরম সিঙারা, চানামিক্শচার, ঝালমুড়ি আরো কতকিছু উঠল। কিন্তু চা কই ? চায়ের জন্যে মনটা উশখুশ করছে এমনসময় চাওয়ালার আবির্ভাব। দশ টাকা কাপ। বললাম দাও এককাপ। এমনসময় পাশ থেকে মহিলাকণ্ঠে আওয়াজ এল - "দুটো, পয়সা আমি দেবো।"
- দেবলীনা ! তুমি চললে কোথায় ?
আমি হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। দেবলীনা কলকাতার মেয়ে। উচ্চশিক্ষিতা, পুলিশকর্তা বাবার একমাত্র আদুরে মেয়ে। এম. ডি ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরির কোন প্রচেষ্টা সে করেনি। নিজে প্র্যাক্টিস করে আর সার্জারিতে ভালো হাত বলে সময় সময় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডাক পায়। ওর সবচেয়ে দূর্বলতা হল অজানার প্রতি অদম্য টান। ওর বক্তব্য অবশ্য আলাদা। ও বলে, - না নেকু, তা নয়। আমার টান তো তুমি।
- কোথায় তুমি শিক্ষিতা সুন্দরী গুনবতী, আর আমি....
- কি তুমি কি ?
- চালচুলোহীন ভবঘুরে।
- এইরকম চালচুলোহীন শিবের প্রেমেই তো মজেছিল সতী।
- হ্যাঁ, আর মরেও ছিল।
- তুমি না, যা তা। এইরকম বললে তোমার সাথে আড়ি।
সেই দেবলীনা আজ পাশে বসে। যার শরীরের গন্ধ আমি বাতাসেও অনুভব করতাম তার পাশে এতক্ষণ বসে থেকেও চিনতে পারলাম না। বললাম, - কোথায় গিয়েছিলে ?
- শান্তিনিকেতন । তোমার প্রেমাকে মনে আছে ?
- প্রেমা মানে প্রেমা সিং চৌহান, - সেই ফাজিল মেয়েটা ?
- উঁহু, ফাজিল বলবে না। সে এখন এসডিপিও। সোসালনেটওয়ার্কের দৌলতেই ওর সাথে আবার দেখা। ও বলল আসতে, চলে এলাম। কিন্তু তোমার সঙ্গে দেখা না হলে মুস্কিল হত।
- কেন ?
- আসলে প্রেমা কিছুদিন ধরে খুব টেনশনে আছে। ওর এরিয়াতে মাফিয়াদের খুব দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রেমা ওর আণ্ডারের সমস্ত আইসি কে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কয়েকটা অপারেশনও হয়। কিছু মাফিয়ার একাউন্টারের পর সব শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু গোল বাধল কাল। আমি আর প্রেমা ব্রেকফাস্ট করছিলাম। তখনই ডিউটি অফিসার এসে একটা চিঠি দিয়ে যায়। ডাকবাক্সের উপর রাখা ছিল।
- ডাকবাক্সের উপর.... সিসিটিভি ছিল না। মানে কে রাখল ওটা জানা যেত।
- বস, তাহলে কি আর শ্রী শ্রীযুক্ত বিক্রমাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের শরণ নিই।
- ও। তা বিষয়বস্তু কি ?
- হুমকি চিঠি। জনৈক মুয়াদেবের। 'তুমি বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করেছ। তোমার দিন শেষ। আমার কোপ হতে কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।' ইত্যাদি ইত্যাদি।
- এখানেও মুয়াদেবে !
-মানে ? তোমার ওখানে ব্যাটা কি করছে ?
দেবলীনাকে রামুয়ার হারানো থেকে পটলার মৃত্যু সবকিছুই বললাম। দেবলীনা গম্ভীর হয়ে বলল, - 'বিক্রম, কলকাতা নয় প্রেমার ওখানে চলো। ব্যাপারটা হাইলি সাসপিসাস।
আমি দেবলীনাকে আমার পরিকল্পনার কথা জানালাম। বললাম, - কলকাতায় চলো। আগে জ্ঞানীবুড়োর মতামতটা জানি। দেবলীনা আর না করলো না।
দুপুর নাগাদ বুড়োর বাড়িতে হাজির হলাম। বৃদ্ধ বন্ধুটির একটা চুলও কাঁচা নেই। পরনে জিন্সের সাথে রঙিন হাফ হাতা গেঞ্জি। আমি তার এই উদ্ভট পোষাকের বিরোধীতা করি বরাবরই। কিন্তু দেবলীনা বুড়োর ডিফেন্স। বুড়োও কম যায় না।
- বয়স কি হে। মনটা দেখো। মনটা আমার আজও তরুণ। আজও আমি ভাবতে পারি ভিক্টোরিয়ায় বসে বাদাম চিবোচ্ছি। আর কোলে দেবলীনার মাথা। কি রোমান্টিক ! কি রোমান্টিক !
- হ্যাঁ, আর অকালে বিধবা করে দিয়ে চিতায় গিয়ে উঠুন। বয়সের তো আর গাছপাথর নেই।
আমি রসিকতা করে বলি। দেখি বন্ধুবর আমার মিচকি মিচকি হাঁসছে।
- দেবলীনা, ওই মর্কটটাকে ছেড়ে আমার গলায় ঝুলে পড় ডার্লিং।
দেবলীনা বুড়োর কথায় খিলখিলিয়ে হেঁসে ওঠে। আমি এবার আসল প্রসঙ্গে আসি। সব শুনে বুড়ো গম্ভীর হয়ে যায়।
- বুঝলে বিক্রম, আমার মনে হয় তোমাদের দুজনের দুটি সমস্যার জড়ই একই জায়গাতে, - বটপাহাড়ী।
- "কিন্তু এই মুয়াদেব কে ? আদৌ কোন দেবতা না মাফিয়ার কোনো নেতা ?" দেবলীনা বুড়োর দিকে তাকায়। বুড়ো চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর জানলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,- "সত্যি কি তা আমিও জানি না। তবে আন্দাজ কিছুটা করতে পারি। ধরো কোনো লোককথাকে কাজে লাগিয়ে ত্রাস তৈরি করা খুব সহজ। মানুষ ভয়ে ঐ স্হানে যায় না, আর চোরাচালান করা সহজ হয়।"
- "কিন্তু টিলার ভিতরের অপার্থিব আলো আর কাঁচের মতো বিচিত্র দেওয়াল কি মানুষের সাধ্যের কাজ ! " আমি প্রতিবাদ করি।
বুড়ো হাঁসে। " বন্ধুবর ! মানুষের অসাধ্য কিছু আছে কি ? তবুও ইনভেস্টিগেশন দরকার। তোমরা যাও। দেবলীনার বন্ধু ওখানকার ডিএসপি তাই পুলিশের সহায়তা পাবে। বাকি যেটুকু রইল হোয়াটসঅ্যাপ আর স্কাইপে তো আছেই। যোগাযোগ করে নেব।
আর হ্যাঁ বিক্রম, সবসময় ফোনটা সাথে রেখো।"
আজ সকাল সকাল ট্রেনে উঠে বসেছি। কপাল ভালো সিট পেয়েছি। জানালার ধারের সিটে মুখে ওড়না ঢাকা নিয়ে দিব্যি সুখনিদ্রা দিচ্ছেন এক তরুণী। তার পাশের সিটটা আমার। দেখতে দেখতে গরম সিঙারা, চানামিক্শচার, ঝালমুড়ি আরো কতকিছু উঠল। কিন্তু চা কই ? চায়ের জন্যে মনটা উশখুশ করছে এমনসময় চাওয়ালার আবির্ভাব। দশ টাকা কাপ। বললাম দাও এককাপ। এমনসময় পাশ থেকে মহিলাকণ্ঠে আওয়াজ এল - "দুটো, পয়সা আমি দেবো।"
- দেবলীনা ! তুমি চললে কোথায় ?
আমি হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। দেবলীনা কলকাতার মেয়ে। উচ্চশিক্ষিতা, পুলিশকর্তা বাবার একমাত্র আদুরে মেয়ে। এম. ডি ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরির কোন প্রচেষ্টা সে করেনি। নিজে প্র্যাক্টিস করে আর সার্জারিতে ভালো হাত বলে সময় সময় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডাক পায়। ওর সবচেয়ে দূর্বলতা হল অজানার প্রতি অদম্য টান। ওর বক্তব্য অবশ্য আলাদা। ও বলে, - না নেকু, তা নয়। আমার টান তো তুমি।
- কোথায় তুমি শিক্ষিতা সুন্দরী গুনবতী, আর আমি....
- কি তুমি কি ?
- চালচুলোহীন ভবঘুরে।
- এইরকম চালচুলোহীন শিবের প্রেমেই তো মজেছিল সতী।
- হ্যাঁ, আর মরেও ছিল।
- তুমি না, যা তা। এইরকম বললে তোমার সাথে আড়ি।
সেই দেবলীনা আজ পাশে বসে। যার শরীরের গন্ধ আমি বাতাসেও অনুভব করতাম তার পাশে এতক্ষণ বসে থেকেও চিনতে পারলাম না। বললাম, - কোথায় গিয়েছিলে ?
- শান্তিনিকেতন । তোমার প্রেমাকে মনে আছে ?
- প্রেমা মানে প্রেমা সিং চৌহান, - সেই ফাজিল মেয়েটা ?
- উঁহু, ফাজিল বলবে না। সে এখন এসডিপিও। সোসালনেটওয়ার্কের দৌলতেই ওর সাথে আবার দেখা। ও বলল আসতে, চলে এলাম। কিন্তু তোমার সঙ্গে দেখা না হলে মুস্কিল হত।
- কেন ?
- আসলে প্রেমা কিছুদিন ধরে খুব টেনশনে আছে। ওর এরিয়াতে মাফিয়াদের খুব দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রেমা ওর আণ্ডারের সমস্ত আইসি কে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কয়েকটা অপারেশনও হয়। কিছু মাফিয়ার একাউন্টারের পর সব শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু গোল বাধল কাল। আমি আর প্রেমা ব্রেকফাস্ট করছিলাম। তখনই ডিউটি অফিসার এসে একটা চিঠি দিয়ে যায়। ডাকবাক্সের উপর রাখা ছিল।
- ডাকবাক্সের উপর.... সিসিটিভি ছিল না। মানে কে রাখল ওটা জানা যেত।
- বস, তাহলে কি আর শ্রী শ্রীযুক্ত বিক্রমাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের শরণ নিই।
- ও। তা বিষয়বস্তু কি ?
- হুমকি চিঠি। জনৈক মুয়াদেবের। 'তুমি বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করেছ। তোমার দিন শেষ। আমার কোপ হতে কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।' ইত্যাদি ইত্যাদি।
- এখানেও মুয়াদেবে !
-মানে ? তোমার ওখানে ব্যাটা কি করছে ?
দেবলীনাকে রামুয়ার হারানো থেকে পটলার মৃত্যু সবকিছুই বললাম। দেবলীনা গম্ভীর হয়ে বলল, - 'বিক্রম, কলকাতা নয় প্রেমার ওখানে চলো। ব্যাপারটা হাইলি সাসপিসাস।
আমি দেবলীনাকে আমার পরিকল্পনার কথা জানালাম। বললাম, - কলকাতায় চলো। আগে জ্ঞানীবুড়োর মতামতটা জানি। দেবলীনা আর না করলো না।
দুপুর নাগাদ বুড়োর বাড়িতে হাজির হলাম। বৃদ্ধ বন্ধুটির একটা চুলও কাঁচা নেই। পরনে জিন্সের সাথে রঙিন হাফ হাতা গেঞ্জি। আমি তার এই উদ্ভট পোষাকের বিরোধীতা করি বরাবরই। কিন্তু দেবলীনা বুড়োর ডিফেন্স। বুড়োও কম যায় না।
- বয়স কি হে। মনটা দেখো। মনটা আমার আজও তরুণ। আজও আমি ভাবতে পারি ভিক্টোরিয়ায় বসে বাদাম চিবোচ্ছি। আর কোলে দেবলীনার মাথা। কি রোমান্টিক ! কি রোমান্টিক !
- হ্যাঁ, আর অকালে বিধবা করে দিয়ে চিতায় গিয়ে উঠুন। বয়সের তো আর গাছপাথর নেই।
আমি রসিকতা করে বলি। দেখি বন্ধুবর আমার মিচকি মিচকি হাঁসছে।
- দেবলীনা, ওই মর্কটটাকে ছেড়ে আমার গলায় ঝুলে পড় ডার্লিং।
দেবলীনা বুড়োর কথায় খিলখিলিয়ে হেঁসে ওঠে। আমি এবার আসল প্রসঙ্গে আসি। সব শুনে বুড়ো গম্ভীর হয়ে যায়।
- বুঝলে বিক্রম, আমার মনে হয় তোমাদের দুজনের দুটি সমস্যার জড়ই একই জায়গাতে, - বটপাহাড়ী।
- "কিন্তু এই মুয়াদেব কে ? আদৌ কোন দেবতা না মাফিয়ার কোনো নেতা ?" দেবলীনা বুড়োর দিকে তাকায়। বুড়ো চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর জানলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,- "সত্যি কি তা আমিও জানি না। তবে আন্দাজ কিছুটা করতে পারি। ধরো কোনো লোককথাকে কাজে লাগিয়ে ত্রাস তৈরি করা খুব সহজ। মানুষ ভয়ে ঐ স্হানে যায় না, আর চোরাচালান করা সহজ হয়।"
- "কিন্তু টিলার ভিতরের অপার্থিব আলো আর কাঁচের মতো বিচিত্র দেওয়াল কি মানুষের সাধ্যের কাজ ! " আমি প্রতিবাদ করি।
বুড়ো হাঁসে। " বন্ধুবর ! মানুষের অসাধ্য কিছু আছে কি ? তবুও ইনভেস্টিগেশন দরকার। তোমরা যাও। দেবলীনার বন্ধু ওখানকার ডিএসপি তাই পুলিশের সহায়তা পাবে। বাকি যেটুকু রইল হোয়াটসঅ্যাপ আর স্কাইপে তো আছেই। যোগাযোগ করে নেব।
আর হ্যাঁ বিক্রম, সবসময় ফোনটা সাথে রেখো।"
No comments:
Post a Comment