Wednesday, April 24, 2019

মুয়াদেবের শাপ - ভাগ ৭//সুব্রত মজুমদার

অবশেষে আমার হস্তক্ষেপে ব্যাপারটার নিস্পত্তি হয়। প্রথমে মাষ্টারমশাই খাবেন পরে আমরা খাবো। যাইহোক মাষ্টারমশাই আমার কথা মেনে নিয়ে নির্মলবাবুর পরিবেশিত খাবার খেলেন। আমরাও নিশ্চিন্তে ডানহাতের কাজ শুরু করলাম। শুধু নির্মলবাবু খেলেন না। খাওয়া দাওয়ার পর ঝিমুনি আসতে লাগলো। অনেক রাস্তা হেঁটেছি আর তার পরেই পেটে সুস্বাদু খাবার পড়ায় চোখ ভারি হয়ে আসছে।
ঘুম যখন ভাঙলো তখন মাথাটা ভারি ভারি লাগছে। কয়টা বাজে দেখার জন্যে কব্জি ঘোরাতে গেলাম। একি ! হাত ঘুরছে না কেনো ? বুঝতে পারলাম হাতদুটো পিছমোড়া করে বাঁধা হয়েছে। পাশেই দেবলীনা ও নির্মলবাবু। দেবলীনার হাতও পিছমোড়া করে বাঁধা। নির্মলবাবুর হাত বাঁধা নেই। তবে দুজনেই অজ্ঞান।
আরে মাষ্টারমশাই কই ? কোথায় তিনি ?
যতদূর দৃষ্টি গেল মাষ্টারমশাইকে কোথাও দেখা গেল না। প্রথমে নির্মলবাবুকে জাগাতে হবে। নির্মলবাবুর হাতে বাঁধন নেই। মাথা দিয়ে পা দিয়ে নানান ভাবে ঠেলাঠেলির পর নির্মলবাবু চোখ মেললেন।
- আঁ.. আঁ.. আঁ...
-ও নির্মলবাবু উঠুন উঠুন। এই নাগপাশ হতে বাঁচান শিগ্গির।
-"কে.. কে..!!!"  নির্মলবাবু ধড়ফড়িয়ে উঠলেন।
- আমি বিক্রম। দয়াকরে উদ্ধার করুন মশাই।
নির্মলবাবুর ধাতস্থ হতে কিছুক্ষন লাগল। তারপর তড়িঘড়ি আমাদের দুজনের হাতের বাঁধন খুললেন। এতক্ষণে দেবলীনারও জ্ঞান এসেছে। সে হাতের পেশীগুলোকে সোজা করতে করতে বলে, "নির্মলবাবু আপনিই ঠিক। ব্যাটা মাষ্টার ঘুমের ওষুধ মেশানো লুচি আলুরদম খাইয়ে এই অবস্থা করেছে। কিন্তু আপনার এমন অবস্থা কেন নির্মলবাবু  ? আপনি তো কিছুই খাননি।"
- আপনারা ঘুমিয়ে হয়ে যেতেই আমার সন্দেহ হয়। এ যে আসলে ঘুম নয় বেহুশী তা বুঝতে সময় লাগলো না। মাষ্টারকে কিছু বলতে যাব এমন সময় পেছন হতে কে মাথায় আঘাত করল আর আমার দুচোখে অন্ধকার।
যেখানে আমাদের রাখা হয়েছিল সেই জায়গাটা একটা ধাতব কক্ষ। আরে, আগেরবার অজ্ঞান হওয়ার পর এখানেই তো পড়েছিলাম আমরা !! কাছাকাছি সেই দরজাটা কোথাও আছে।
-"তাহলে পটল এখানেই মারা গিয়েছিল ?" দেবলীনা বিস্ময় প্রকাশ করে।
- "চলুন বিক্রমবাবু, দরজাটা খুঁজে বাড়ি ফেরা যাক" নির্মলবাবু তাড়াদেন।
-"আমরা বাড়ি ফেরার জন্যে এখানে আসিনি নির্মলবাবু। আমাদের গোটা রহস্যের কিনারা করতে হবে।" দেবলীনা এগিয়ে যায়।
নির্মলবাবু সন্মতি জানালে আমরা এগোতে লাগলাম। এখন আমরা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। মোবাইল বা ওয়াকিটকি সবই মুয়াদেবের ভোগে গেছে। কিছুটা খোঁজার পর দরজাটা মিলল। আরে, পাশে আরেকটা দরজা না ! সেদিন তাড়াহুড়োয় লক্ষ্য করিনি। কিন্তু দরজাটা তো বন্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখলাম ঘরের কোনে একটা পেল্লাই সাইজের ক্রিষ্টাল বল। বলটাতে হাত দিতেই গোটা ঘর আলোকিত হয়ে উঠলো। বুঝলাম এটা উন্নত টেকনোলজির নমুনা। বলটার পাশে টেবিলে একটা পাজল।
- "এটা আবার কি ?" দেবলীনা পাজলটাকে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে।
-"কিছুই না ম্যাডাম। এটা খেলনা। মুয়া-মুয়ির দুলেরা লাল্লার টয়ি আছে।" নির্মলবাবু রসিকতা করে ওঠেন। দেবলীনা হাঁসতে থাকে।
- " টয় নয় মশাই, এটাই সম্ভবত গুপ্তদরজা খোলার চাবি।" আমি পাজলটাকে সলভ করার চেষ্টা করতে থাকি। একসময় পাজলটা একটা এলিয়েন শিপের আকার নেয়। আর শিপটার মাঝবরাবর একটি চাবির মতো টুকরো উঠে আসে। দেবলীনা সঙ্গে সঙ্গে টুকরোটা তুলে নেয়।
-"চলো" বলে দেবলীনা টুকরোটা দরজার কি-হোলে ঢোকালো। আর সঙ্গে সঙ্গে একটা যান্ত্রিক আওয়াজ করে দরজাটা খুলে গেল। দেখি একটা সিঁড়ি পাকদিয়ে নিচে নেমে গেছে। নিচে বিশাল হলঘর আর তাতে নানান রকমের বিচিত্র যন্ত্র। বহুবর্ণের আলো জ্বলানেভা করছে।
হলঘরের একপাশের দেওয়ালে বিশাল মনিটর। আর তার সামনে কন্ট্রোলপ্যানেল ও একটা চেয়ার। চেয়ারে বসে আছে অন্তত বারো-চৌদ্দ ফুট লম্বা এক অতিমানব। তার তিনটে চোখ। সবগুলোই বোঝা। ঘরের মাঝখানে একটা কফিনের মতো আধারে ঐরকমই দেখতে একটি দেহ।
- "মুয়া-মুয়ি  !!!!" দেবলীনার মুখ হতে ফিসফিসে আওয়াজ বেরিয়ে এল।
-"হ্যাঁ।" আমি মাথা নেড়ে সন্মতি জানালাম
এমনসময় ওপাশ হতে গুলির শব্দ আসতেই আমরা কফিনটার পেছনে লুকিয়ে পড়লাম। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম গুলির আঘাতে ঘরের ভেতরের কোনো জিনিসের ক্ষতি হচ্ছে না। সম্ভবত কোনো বুলেটপ্রূফ উপাদানে এসব তৈরি। এমনসময় দেখলাম ঘরের ভেতরে চারজন লোক বন্দুক হাতে এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে দু'জন আমাদের চেনা। একজন মাষ্টারমশাই ও অপরজন বটপাহাড়ীর গাঁবুড়ো দীনেশ।
আমি গুঁড়ি মেরে মেরে এগিয়ে গেলাম। নার্ভাস সিস্টেমের উপর আমার জ্ঞান যেকোনো ডাক্তারের থেকেও বেশি। তাই পিছন দিয়ে গিয়ে ঘাড়ের ঠিক জায়গামতো রদ্দা মারতেই একে দুজন শয়তান কাটা কলা গাছের মতো পড়ে গেল। এবার পালা মাষ্টারমশাই ও দীনেশের।
ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেই দুজনের হাতের অস্ত্র ছিটকে পড়ল নিচে। এতক্ষণে নির্মলবাবু ও দেবলীনা পিস্তল দুটো কুড়িয়ে ওদের কপালে ঠেকিয়েছে।
-"কি মাষ্টার খবর কি ?" দেবলীনা হেঁসে ওঠে।
-"আমদের ছেড়ে দাও নইলে মুয়াদেবের শাপে সবাই মরবে।" মাষ্টারমশাই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন। 

No comments:

Post a Comment

জলতরঙ্গ

#জলতরঙ্গ (পর্ব ১) #সুব্রত_মজুমদার                                                             এক                             আশ্বিনের এখনও শ...