- - তিন - -
নিচের তলায় একটা রুম খালি হয়ে যাওয়ায় বিক্রমদের সেই রুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রুমটা মোটেরউপর ভালো হলেও সমুদ্রের হাওয়ায় আয়েশে ঘুমানোর সুযোগ নেই।
দুপুরের খাবার খেতে দেরি হয়ে গিয়েছে। অঘোরবাবু বারবার ঘড়ি দেখছেন আর পায়চারি করছেন। " আচ্ছা বিক্রমবাবু, এটা কেমন হল বলুন তো। নির্ঘাত অশ্লেষা বা মঘাতে বেরিয়েছি। এখন জেলে না গেলেই হল। আর যদি জেলে নাও যাই ওই বগু খেয়েই দুজনের ভবলীলা সাঙ্গ হবে মশাই।"
"ওটা বগু নয় ফুগু।" বিক্রমের নির্বিকার উত্তর।
এমন সময় বিজন বাবু রুমে এলেন। তিনি শান্ত গলায় বললেন," আপনাদের কাছে আমি অপরাধী। আপনারা এসেছেন পুরি বেড়াতে এনজয় করতে আর আমার হোটেলে এসে আপনারা কি সব ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লেন....। "
অঘোরবাবু বিক্রমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে বললেন, " ফ্রি অনেক খেয়েছি মশাই ! এবার তো দেখছি ফ্রির ঠেলায় আমরাই না ফ্রি হয়ে যাই মশাই। আপনার হোটেলে ভুত, মার্ডার, ডুগু কি নেই বলুন তো। "
বিক্রম অঘোরবাবুকে বাধা দিয়ে বললেন," ওটা ডুগু নয় ফুগু হবে। আর বিজনবাবু আপনি অঘোরবাবুর কথায় কিছু মনে করবেন না।"
বিজনবাবু বললেন," না না তা কেন। আসলে যে কথাটা আমি বলতে এসেছিলাম.... অনেক বেলা হয়ে গেল খাওয়া দাওয়াটা যদি করে নেন.... ! সব রেডি। "
বিক্রম ও অঘোরবাবু বিজনবাবুর সাথে ডাইনিং হলে গেলেন। সব বোর্ডারদের খাওয়াই প্রায় শেষ। কেবল সামনের একটা টেবিলে দুজন ও মাঝের দিকে একটা টেবিলে চারজন রয়েছেন। তাদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। বিক্রম সামনের একটা টেবিলে বসে পড়ল। ভাত, শাক, আলুপোস্ত,এঁচড়ের তরকারি ও মাছের ঝোল এল । অঘোরবাবু খেতে খেতে মাছের প্লেটের দিকে হাত বাড়ালেন। প্লেট হতে মাছের মুড়োটা তুলে নিয়ে বসালেন এক কামড় । তারপর চিবোতে চিবোতে বিক্রমের দিকে তাকিয়েই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ছুটলেন সোজা সিঙ্কের দিকে। বিক্রম সেই দিক তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর আবার খাবারে মনোনিবেশ করল।
"স্যার কিছু লাগবে ?" পরিবেশনের ছেলেটা টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল। বিক্রম তার দিকে চেয়ে বলল, " মেকাপের কিট।" ছেলেটা কোন উত্তর না দিয়ে বিক্রমের পাতে কিছুটা আলুপোস্ত দিয়ে চলে গেল।
একটু পরেই ফিরে এলেন অঘোরবাবু। এই মিনিট কয়েকের ভিতরেই তার চোখমুখ যেন বসে গিয়েছে। গলার আওয়াজ ক্ষীণ। অনেক কষ্টে ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, " ফুগু ! আই অ্যাম ডাইং মশাই ! গুড বাই। " বলেই অঘোরবাবু অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
পরিবেশনের লোকজন এসে অঘোরবাবুকে পাঁজাকোলা করে তুলে রুমে নিয়ে গেল। বিক্রমের কিন্তু কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। সে ভাত শেষ করে চাটনির জন্য হাঁক দিল। আঙুল চাটতে চাটতে অপেক্ষা করতে থাকল চাটনির।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা ঘুমানোর পর অঘোরবাবু মৃত্যুমুখ হতে ঘুরে এলেন। উঠেই দেখলেন বিক্রম রেডি হয়ে বসে আছে। একগাল হেঁসে বিক্রম বলল, " অঘোরবাবু, কুইক ! ধ্বজাবাঁধা দেখতে যাবো।"
অঘোরবাবু তড়িঘড়ি উঠে রেডি হয়ে নিলেন। একটু দেরি হয়ে গেল বটে কিন্তু ধ্বজাবাঁধা দেখতে পাওয়া গেল। একটা বাচ্চা ছেলে কি সুন্দর ধীরে ধীরে মন্দিরের গা-বেয়ে উঠে গেলে নতুন পতাকা হাতে নিয়ে। পুরানো পতাকার পরিবর্তন করে নতুন পতাকা লাগানো হল। তারপর আবার মন্দিরের খাঁজ ধরে ধরে নেমে এল ছেলেটি। উপস্থিত জনতা 'জয় জগন্নাথ' ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলল।
অঘোরবাবু এতক্ষণে ঘোর কাটিয়ে দু'হাত তুলে বলে উঠলেন, "জয় বাবা জগন্নাথঅ ! ধাঁই কিড়িকিড়ি ।" তারপর বিক্রমের দিকে তাকিয়ে বললেন, " আপনি বিশ্বাস করবেন না মশাই সেই রঘু মাছ খেয়ে যখন মরতে বসেছিলাম তখন ভেবেছিলাম এই শেষ, আর কোনার্ক দেখা আমার হলো না।"
বিক্রম বলল, " অঘোরবাবু, ওটা রঘু নয় ফুগু। আর আপনি শুধু কোনার্ক কেন নন্দনকানন, ধবলগিরি, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি সবই দেখবেন।"
মন্দির থেকে বেরোতেই বিক্রমের পাশে একটা অটো থামল। বিক্রম আর অঘোরবাবু তাতে চড়ে বসলেন। অটোর সিটের উপরে একটা পেটমোটা ব্যাগ পড়েছিল। বিক্রম পকেট হতে বড় সাইজের একটা জামাকাপড়ের পলিব্যাগ বের করে ব্যাগটা তাতে ভরে নিল। অঘোরবাবু হাঁ হাঁ করে উঠলেন। " আরে কি করছেন মশাই, যদি ওতে বোম থাকে তাহলে ! না না বিক্রমবাবু, ওটা ফেলিয়ে দিন।"
বিক্রম অঘোরবাবুকে কোনোক্রমে থামালেন ।সারাটা রাস্তা অঘোরবাবু জড়সড় হয়ে থাকলেন। হোটেলে এসে বিক্রম ব্যাগটা খুলল। ব্যাগের ভেতরটা পোষাক পরচুলা ইত্যাদিতে ঠাঁসা। অঘোরবাবু বিস্ময়ে চোখদুটো গোল গোল করে বিক্রমের দিকে তাকালেন। বিক্রম বলল," এসব বড়বাবু শ্রীযুক্ত কমলদল মহাপাত্রের উপহার।"
অঘোরবাবু বললেন, " আর উপহার দেবার জিনিস পেলেন না বড়বাবু, শেষে বহুরুপীর পোষাক।"
"ইয়েস মাই লর্ড ! বহুরুপীর পোষাক। আর এগুলো পরেই আমরা যাবো উদয়গিরি খণ্ডগিরি। জানেন তো ধবলগিরি তৈরি হয়েছে ভগবান বুদ্ধের বিশ্বশান্তির বাণীকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তাই ধবলগিরি একটি শান্তিসৌধ।
২৬৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মগধের সিংহাসনে বসেন মহারাজ প্রীয়দর্শী অশোক। সিংহাসনে বসার জন্যে তিনি তার ভাইদের নির্মমভাবে হত্যা করেন। তার নির্মমতার জন্য তাকে বলা হত 'চণ্ডাশোক'। ভারতের বহুরাজ্য তার পদানত হলেও হার মানেনি কলিঙ্গ। আর কলিঙ্গ জয় করতে না পারলে সম্রাট অশোকের দাক্ষিনাত্য জয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, তাই তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। কলিঙ্গরাজ অনন্ত পদ্মণাভনের সঙ্গে যুদ্ধে দুই পক্ষের বিশাল সংখ্যক সেনা নিহত ও আহত হন। রাজা অশোক যুদ্ধে জয়ী হলেও এই যুদ্ধের ভয়াবহতায় তিনি ব্যথিত হন। এরপর উপগুপ্তের কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন ও শান্তির বাণী প্রচারে মন দেন। "
অঘোরবাবু বিক্রমের কাহিনী শুনে চোখ বড় বড় করে বলে ওঠেন," ওয়াণ্ডারফুল ! কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে পরচুলার কি সম্পর্ক মশাই ? "
বিক্রম হাঁসে । " আছে অঘোরবাবু আছে। সম্পর্ক তো আছেই। কাল আমরা যাব ধবলগিরি। আর সেই ধবলগিরির পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দয়া নদী। এই দয়া নদীর তীরেই হয়েছিল সেই রক্তক্ষয়ী কলিঙ্গ যুদ্ধ। সৈন্যদের রক্তে দয়া নদীর জল হয়ে উঠেছিল লাল। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর রাজা অনন্ত পদ্মণাভনের সোনা-রূপো হীরে জহরতের একটা অংশ নিয়ে তার বিশ্বস্ত দেহরক্ষী মল্লদেবন নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এখানেই সাসপেন্স মাই ওল্ড ফেলো। "
অঘোরবাবু বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়লেন। তারপর বললেন, " আপনার সঙ্গে এসে অব্দি সাসপেন্স তো কম দেখলাম না মশাই, আমার থ্রিলার উপন্যাসেও এত সাসপেন্স থাকে না। তবে মশাই, ফিরে গিয়েই লিখতে বসব। গুছিয়ে নিয়েছি মনে মনে, বেস্ট সেলার নভেল। "
বিক্রম বলল," সে নাহয় হবে, কিন্তু এখন তো দক্ষিণ হস্তের কাজটা সমাধা করতে হয়। ওবেলা বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে। চলুন। "
নিচের তলায় একটা রুম খালি হয়ে যাওয়ায় বিক্রমদের সেই রুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রুমটা মোটেরউপর ভালো হলেও সমুদ্রের হাওয়ায় আয়েশে ঘুমানোর সুযোগ নেই।
দুপুরের খাবার খেতে দেরি হয়ে গিয়েছে। অঘোরবাবু বারবার ঘড়ি দেখছেন আর পায়চারি করছেন। " আচ্ছা বিক্রমবাবু, এটা কেমন হল বলুন তো। নির্ঘাত অশ্লেষা বা মঘাতে বেরিয়েছি। এখন জেলে না গেলেই হল। আর যদি জেলে নাও যাই ওই বগু খেয়েই দুজনের ভবলীলা সাঙ্গ হবে মশাই।"
"ওটা বগু নয় ফুগু।" বিক্রমের নির্বিকার উত্তর।
এমন সময় বিজন বাবু রুমে এলেন। তিনি শান্ত গলায় বললেন," আপনাদের কাছে আমি অপরাধী। আপনারা এসেছেন পুরি বেড়াতে এনজয় করতে আর আমার হোটেলে এসে আপনারা কি সব ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লেন....। "
অঘোরবাবু বিক্রমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে বললেন, " ফ্রি অনেক খেয়েছি মশাই ! এবার তো দেখছি ফ্রির ঠেলায় আমরাই না ফ্রি হয়ে যাই মশাই। আপনার হোটেলে ভুত, মার্ডার, ডুগু কি নেই বলুন তো। "
বিক্রম অঘোরবাবুকে বাধা দিয়ে বললেন," ওটা ডুগু নয় ফুগু হবে। আর বিজনবাবু আপনি অঘোরবাবুর কথায় কিছু মনে করবেন না।"
বিজনবাবু বললেন," না না তা কেন। আসলে যে কথাটা আমি বলতে এসেছিলাম.... অনেক বেলা হয়ে গেল খাওয়া দাওয়াটা যদি করে নেন.... ! সব রেডি। "
বিক্রম ও অঘোরবাবু বিজনবাবুর সাথে ডাইনিং হলে গেলেন। সব বোর্ডারদের খাওয়াই প্রায় শেষ। কেবল সামনের একটা টেবিলে দুজন ও মাঝের দিকে একটা টেবিলে চারজন রয়েছেন। তাদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। বিক্রম সামনের একটা টেবিলে বসে পড়ল। ভাত, শাক, আলুপোস্ত,এঁচড়ের তরকারি ও মাছের ঝোল এল । অঘোরবাবু খেতে খেতে মাছের প্লেটের দিকে হাত বাড়ালেন। প্লেট হতে মাছের মুড়োটা তুলে নিয়ে বসালেন এক কামড় । তারপর চিবোতে চিবোতে বিক্রমের দিকে তাকিয়েই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ছুটলেন সোজা সিঙ্কের দিকে। বিক্রম সেই দিক তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর আবার খাবারে মনোনিবেশ করল।
"স্যার কিছু লাগবে ?" পরিবেশনের ছেলেটা টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল। বিক্রম তার দিকে চেয়ে বলল, " মেকাপের কিট।" ছেলেটা কোন উত্তর না দিয়ে বিক্রমের পাতে কিছুটা আলুপোস্ত দিয়ে চলে গেল।
একটু পরেই ফিরে এলেন অঘোরবাবু। এই মিনিট কয়েকের ভিতরেই তার চোখমুখ যেন বসে গিয়েছে। গলার আওয়াজ ক্ষীণ। অনেক কষ্টে ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, " ফুগু ! আই অ্যাম ডাইং মশাই ! গুড বাই। " বলেই অঘোরবাবু অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
পরিবেশনের লোকজন এসে অঘোরবাবুকে পাঁজাকোলা করে তুলে রুমে নিয়ে গেল। বিক্রমের কিন্তু কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। সে ভাত শেষ করে চাটনির জন্য হাঁক দিল। আঙুল চাটতে চাটতে অপেক্ষা করতে থাকল চাটনির।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা ঘুমানোর পর অঘোরবাবু মৃত্যুমুখ হতে ঘুরে এলেন। উঠেই দেখলেন বিক্রম রেডি হয়ে বসে আছে। একগাল হেঁসে বিক্রম বলল, " অঘোরবাবু, কুইক ! ধ্বজাবাঁধা দেখতে যাবো।"
অঘোরবাবু তড়িঘড়ি উঠে রেডি হয়ে নিলেন। একটু দেরি হয়ে গেল বটে কিন্তু ধ্বজাবাঁধা দেখতে পাওয়া গেল। একটা বাচ্চা ছেলে কি সুন্দর ধীরে ধীরে মন্দিরের গা-বেয়ে উঠে গেলে নতুন পতাকা হাতে নিয়ে। পুরানো পতাকার পরিবর্তন করে নতুন পতাকা লাগানো হল। তারপর আবার মন্দিরের খাঁজ ধরে ধরে নেমে এল ছেলেটি। উপস্থিত জনতা 'জয় জগন্নাথ' ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলল।
অঘোরবাবু এতক্ষণে ঘোর কাটিয়ে দু'হাত তুলে বলে উঠলেন, "জয় বাবা জগন্নাথঅ ! ধাঁই কিড়িকিড়ি ।" তারপর বিক্রমের দিকে তাকিয়ে বললেন, " আপনি বিশ্বাস করবেন না মশাই সেই রঘু মাছ খেয়ে যখন মরতে বসেছিলাম তখন ভেবেছিলাম এই শেষ, আর কোনার্ক দেখা আমার হলো না।"
বিক্রম বলল, " অঘোরবাবু, ওটা রঘু নয় ফুগু। আর আপনি শুধু কোনার্ক কেন নন্দনকানন, ধবলগিরি, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি সবই দেখবেন।"
মন্দির থেকে বেরোতেই বিক্রমের পাশে একটা অটো থামল। বিক্রম আর অঘোরবাবু তাতে চড়ে বসলেন। অটোর সিটের উপরে একটা পেটমোটা ব্যাগ পড়েছিল। বিক্রম পকেট হতে বড় সাইজের একটা জামাকাপড়ের পলিব্যাগ বের করে ব্যাগটা তাতে ভরে নিল। অঘোরবাবু হাঁ হাঁ করে উঠলেন। " আরে কি করছেন মশাই, যদি ওতে বোম থাকে তাহলে ! না না বিক্রমবাবু, ওটা ফেলিয়ে দিন।"
বিক্রম অঘোরবাবুকে কোনোক্রমে থামালেন ।সারাটা রাস্তা অঘোরবাবু জড়সড় হয়ে থাকলেন। হোটেলে এসে বিক্রম ব্যাগটা খুলল। ব্যাগের ভেতরটা পোষাক পরচুলা ইত্যাদিতে ঠাঁসা। অঘোরবাবু বিস্ময়ে চোখদুটো গোল গোল করে বিক্রমের দিকে তাকালেন। বিক্রম বলল," এসব বড়বাবু শ্রীযুক্ত কমলদল মহাপাত্রের উপহার।"
অঘোরবাবু বললেন, " আর উপহার দেবার জিনিস পেলেন না বড়বাবু, শেষে বহুরুপীর পোষাক।"
"ইয়েস মাই লর্ড ! বহুরুপীর পোষাক। আর এগুলো পরেই আমরা যাবো উদয়গিরি খণ্ডগিরি। জানেন তো ধবলগিরি তৈরি হয়েছে ভগবান বুদ্ধের বিশ্বশান্তির বাণীকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তাই ধবলগিরি একটি শান্তিসৌধ।
২৬৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মগধের সিংহাসনে বসেন মহারাজ প্রীয়দর্শী অশোক। সিংহাসনে বসার জন্যে তিনি তার ভাইদের নির্মমভাবে হত্যা করেন। তার নির্মমতার জন্য তাকে বলা হত 'চণ্ডাশোক'। ভারতের বহুরাজ্য তার পদানত হলেও হার মানেনি কলিঙ্গ। আর কলিঙ্গ জয় করতে না পারলে সম্রাট অশোকের দাক্ষিনাত্য জয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, তাই তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। কলিঙ্গরাজ অনন্ত পদ্মণাভনের সঙ্গে যুদ্ধে দুই পক্ষের বিশাল সংখ্যক সেনা নিহত ও আহত হন। রাজা অশোক যুদ্ধে জয়ী হলেও এই যুদ্ধের ভয়াবহতায় তিনি ব্যথিত হন। এরপর উপগুপ্তের কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন ও শান্তির বাণী প্রচারে মন দেন। "
অঘোরবাবু বিক্রমের কাহিনী শুনে চোখ বড় বড় করে বলে ওঠেন," ওয়াণ্ডারফুল ! কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে পরচুলার কি সম্পর্ক মশাই ? "
বিক্রম হাঁসে । " আছে অঘোরবাবু আছে। সম্পর্ক তো আছেই। কাল আমরা যাব ধবলগিরি। আর সেই ধবলগিরির পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দয়া নদী। এই দয়া নদীর তীরেই হয়েছিল সেই রক্তক্ষয়ী কলিঙ্গ যুদ্ধ। সৈন্যদের রক্তে দয়া নদীর জল হয়ে উঠেছিল লাল। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর রাজা অনন্ত পদ্মণাভনের সোনা-রূপো হীরে জহরতের একটা অংশ নিয়ে তার বিশ্বস্ত দেহরক্ষী মল্লদেবন নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এখানেই সাসপেন্স মাই ওল্ড ফেলো। "
অঘোরবাবু বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়লেন। তারপর বললেন, " আপনার সঙ্গে এসে অব্দি সাসপেন্স তো কম দেখলাম না মশাই, আমার থ্রিলার উপন্যাসেও এত সাসপেন্স থাকে না। তবে মশাই, ফিরে গিয়েই লিখতে বসব। গুছিয়ে নিয়েছি মনে মনে, বেস্ট সেলার নভেল। "
বিক্রম বলল," সে নাহয় হবে, কিন্তু এখন তো দক্ষিণ হস্তের কাজটা সমাধা করতে হয়। ওবেলা বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে। চলুন। "
No comments:
Post a Comment