বটেশ্বর বলল, " যা বলেন কত্তা, আমিও ছাড়বো না বলে রাখলাম কিন্তু।" বটেশ্বরের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল মনে হয় যেন গড়িয়ে পড়ল। অনেকেই লক্ষ্য করল, আবার অনেকেই অবিশ্বাস করে বলল, " বটেশ্বরের মতো ঘুঘু লোক বিনা স্বার্থে কাঁদবে ! যে ভুতের শরীর হতেও তেল নিংড়ে নেয় তার চোখের জলে বিশ্বাস হয় না। "
করালির মা সত্তর-আশি বছরের বৃদ্ধা, সে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে এসে খুনখুনে গলায় বলল, " রসিকঠাকুরপো বরাবরই ধাতপাতলা, তুলারাশি তো...। তা ও বাবা বটা, রসিকঠাকুরপো বাঁচবে তো রে ? "
বটেশ্বর তার মাথার ঝাঁকড়া চুল নাড়িয়ে বলল," অলীকপুরের সবকিছুর কাটান আমার কাছে আছে কাকি। তুমি দেখতেই থাকো না কি করি আমি।"
জ্ঞান হবারমাত্র রসিকদাদুর দৃষ্টি গেল বটেশ্বরের মুড়ো ঝাঁটার দিকে, রসিকদাদু আবার চোখ বুজলেন। এইভাবে যতবার রসিকদাদু চোখমেলেন ততবারই আবার চোখ বুঝতে হয়। এইভাবে বটেশ্বর বিরক্ত হয়ে উঠল। সে আর রসিকদাদুর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করল না। মন্ত্র বলতে বলতে ঝাঁটা চালাতে লাগল।
অলীকপুরের শালিখ জোড়া ঘুরে বেড়ায় সারা পাড়া,
মাছি মশা পচা ব্যাঙ রসিকদাদুর বেতো ঠ্যাং
সেই ঠ্যাঙে বসল মশা, মশার এবার শেষের দশা।
বটেশ্বরের খিলের ঝাঁটা দে দমাদম এক্কাশিটা,
তাতেও যদি না দেয় রা শুকনা মরিচ লে আ।
মন্ত্রযুক্ত ঝাঁটার প্রভাবে রসিকদাদু উঠে দাঁড়ালেন। পিঠে বুকে সর্বাঙ্গে তার ঝাঁটার কাঠি ফুটে চিনচিনে জ্বালা। রসিকদাদু বিচক্ষণ মানুষ, তিনি জানেন এসময় বটেশ্বরের বিরোধিতা করলে বটেশ্বর স্বমহিমা বজায় রাখতে আবার আসুরিক চিকিৎসা শুরু করবে, তাই তিনি এমন ভাব করলেন যেন এইমাত্র একডজন প্রেতাত্মা তার শরীর থেকে বেরিয়ে গেল।
রসিকদাদু বললেন, "আমি কোথায় ?"
বটেশ্বর ধুনুচিতে শুকনো লঙ্কা দিতে যাচ্ছিল কিন্তু রসিকদাদুর আচমকা সুস্থ্য হয়ে যাওয়াতে সে লঙ্কাগুলো নামিয়ে রাখল। তারপর একগাল হেঁসে সবার উদ্দেশ্যে বলল, " দেখলেন তো সবাই, এই বটেশ্বর ওঝাকে ভয় পায় না এমন ভুত ভূভারতে নেই। চলুন এবার ডাক্তারের চিকিৎসা করি। "
সবাই চলল উৎসাহী হয়ে। আশ্রমের একটা ঘরে একপাশে হাতমুখ বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে চেয়ারম্যান হয়ে বসে আছে রজত উকিলের একমাত্র বংশপ্রদীপ শ্রীমান সাহেব। আর সাহেবের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পঞ্চানন ডাক্তারের মেয়ে তিন্নি। সাহেবের দৃষ্টিও অপলক।
ঘরের আরেকদিকে স্টেথস্কোপ গলায় প্লাস্টার-অফ-প্যারিসের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পঞ্চানন ডাক্তার। বটেশ্বর প্রথমে তিন্নি আর সাহেবের কাছে এসে একবার সাহেবের দিকে তো একবার তিন্নির দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। তারপর চোখ কচলে মেঝেতে বসে পড়ল। একটু ধাতস্থ হয়ে বলল, " উচাটন। এর কাটানও আমার কাছে আছে, তবে পরে। আগে ডাক্তারবাবুকে চেকআপ করি।"
বটেশ্বর এতদিনে কোন ডাক্তার পেশেণ্ট পেয়েছে, তাই সে ডাক্তারি কায়দায় চেকআপের জন্যে পঞ্চানন ডাক্তারের স্টেথস্কোপটি গলা থেকে খুলতে গেল। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি। সাপবাবাজী পঞ্চানন ডাক্তারের আশ্রয় ত্যাগ করে বটেশ্বরের আলখাল্লার ভেতরে ঢুকে গেল। একটানা দাঁড়িয়ে থাকা, আতঙ্ক আর অনিদ্রায় পঞ্চানন ডাক্তার মাটিতে পড়েই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সবাই তাকে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে গেল শুশ্রূষার জন্যে।
বটেশ্বর হাতের ভঙ্গি করে করে নানান নৃত্যের নমুনা দেখাতে লাগলো। উপস্থিত দর্শকদের হাততালিও পড়ল। বটেশ্বরের নৃত্যপটুতা আমজনতার ভালো লাগলেও হাতিডোবা গ্রামের মাতব্বরদের ভালো লাগলো না। তারা এসবকিছুতেই অলীকপুরের অসাধু পরিকল্পনার ইঙ্গিত পেলেন।
সুভাষখুঁড়ো বললেন, "আর নয়, জল নাকের উপরে চলে গেছে। এবার কিছু একটা করতে হবে।"
রসিকদাদু একটু সুস্থ্য হয়েছেন। তিনি এখনও সাপের ব্যাপারটা মামুলি বলে মেনে নিতে পারছেন না। তার দৃঢ় বিশ্বাস অলীকপুরের কুচুটেগুলো তার বুড়ো হাড়ে সর্পবাণ মেরেছে। নেহাত দুধ-ঘি খাওয়া ব্যায়ামলব্ধ শরীর তাই কাবু করে উঠতে পারেনি। একজন কমবয়সি ছোকরা শুধু বলেছিল, "দাদু, তোমার বাড়িতে দুধ-ঘি কবে হতে হয় ? ঠাকমা তো তোমার জন্য দুবেলা গাঁদাল পাতার ঝোল রাঁধে।"
রসিকদাদু লাফিয়ে উঠে গালাগালি দিয়ে দিয়ে বললেন, "তোর এত পাকামো কেন রে ! আমি কি খাই কি না খাই তার হিসেব তোকে দেব। পাজী গর্দভ....."
সুভাষখুঁড়ো বললেন, "রসিকখুঁড়ো, আমাদের উচিত হবে অলীকপুর আক্রমণ করা। "
সুভাষখুঁড়োর কথায় কর্ণেল সরকার সন্মতি প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন, "আক্রমণ হবে গেরিলা কায়দায়। আমি সামনে থাকব। ভারত-চিন যুদ্ধে যেমনভাবে লড়াই করেছিলাম তেমনি লড়ব। জীবন যায় যাক, সন্মান ...কভি নেহি।"
কর্ণেল সরকারের রণং দেহি মনোভাবে হাতিডোবার সকলে অনেকটাই অক্সিজেন পেল। তারা মহাভারতীয় কায়দায় কর্ণেল সরকারকে সেনাপতি হিসেবে মনোনীত করলেন। মহান্তজী হলেন উপসেনাধ্যক্ষ -- অবশ্যই পদাধিকার বলে। হাতিডোবা গ্রামে মহান্তজীর একগুঁয়েমি সর্বজনবিদীত। ইতিহাসেও তার মতো চরিত্র আছে, যাদের জেদের কাছে অনেক সম্ভাবনা ও প্রতিভা নষ্ট হয়ে গেছে। যাইহোক এটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
মহান্তজী উপসেনাধ্যক্ষ হয়েই কর্ণেল সরকারের ডানা ছাঁটলেন। বললেন, "কর্ণেল বাবা খুব গরম মাথার লোক, ওর সব কথা তোমরা ধরো না বাবারা। আমি বলছিলাম কি..."
মহান্তজীর কথা শেষ হবার আগেই সভাস্থ একজন লাফিয়ে উঠে বলল, " ওসব প্রেম বিলিয়ে হবে না প্রভূ, প্রেম বিলোতে হলে অলীকপুরে মায়া ঠাকুমার কাছে প্রেম বিলোন। আমরা পরমাণু হামলা চাই।"
মহান্তজী রাগে গজগজ করতে লাগলেন। রসিকদাদু বললেন," পরমাণু মানে অ্যাটম বোম ! তা তোমরা পারো বাবা। ইস্কুলের গণ্ডিটা না পেরোনোর এই এক ঝামেলা।"
কর্ণেল সরকার বললেন," ওসব ছাড়ুন তো ! এবার কাজের কথায় আসা যাক। আমরা আজ রাত্রে অলীকপুরে হানা দেব গেরিলা কায়দায়। রজত রায়, অবিনাশ ঘোষ সহ দু'চারজন অলীকপুরের মাতব্বরকে বেঁধে আনলেই কাজ। এবার আমরা শর্ত দেব আত্মসমর্পণ করতে। তাছাড়া যা দাবিদাওয়া সবকিছু আদায় করে নেব।"
মহান্তজী বললেন," যা ভালো বোঝো করো, কিছু হলে আমাকে বলো না। "
রসিকদাদু বললেন," আপনি ভজন সাধন করুন মহারাজজী। সঠিক সময় হলে আপনার ভবনে রথ পৌঁছে যাবে। আপনাকে ছাড়া অভিযান অসম্পূর্ণ। "
রসিকদাদুর কথায় মহান্তজী রাগে গজগজ করতে করতে সভা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। এই ঘটনায় কারোর কোনো আফসোস হল বলে মনে হল না। সবাই পরবর্তী আলোচনায় মনোনিবেশ করল।
কর্ণেল সরকার বললেন," সাহেবকে চাপ দিয়ে পজিশনগুলো জেনে নিতে হবে। অনেক তথ্য চাই। বাকি তথ্য সরবরাহ করবে শ্রীকান্ত দাস। ও আজবপুরের লোক, আর ভিক্ষা করতে যায় অলীকপুরে।" সভা তখনকার মতো শেষ হলো।
করালির মা সত্তর-আশি বছরের বৃদ্ধা, সে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে এসে খুনখুনে গলায় বলল, " রসিকঠাকুরপো বরাবরই ধাতপাতলা, তুলারাশি তো...। তা ও বাবা বটা, রসিকঠাকুরপো বাঁচবে তো রে ? "
বটেশ্বর তার মাথার ঝাঁকড়া চুল নাড়িয়ে বলল," অলীকপুরের সবকিছুর কাটান আমার কাছে আছে কাকি। তুমি দেখতেই থাকো না কি করি আমি।"
জ্ঞান হবারমাত্র রসিকদাদুর দৃষ্টি গেল বটেশ্বরের মুড়ো ঝাঁটার দিকে, রসিকদাদু আবার চোখ বুজলেন। এইভাবে যতবার রসিকদাদু চোখমেলেন ততবারই আবার চোখ বুঝতে হয়। এইভাবে বটেশ্বর বিরক্ত হয়ে উঠল। সে আর রসিকদাদুর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করল না। মন্ত্র বলতে বলতে ঝাঁটা চালাতে লাগল।
অলীকপুরের শালিখ জোড়া ঘুরে বেড়ায় সারা পাড়া,
মাছি মশা পচা ব্যাঙ রসিকদাদুর বেতো ঠ্যাং
সেই ঠ্যাঙে বসল মশা, মশার এবার শেষের দশা।
বটেশ্বরের খিলের ঝাঁটা দে দমাদম এক্কাশিটা,
তাতেও যদি না দেয় রা শুকনা মরিচ লে আ।
মন্ত্রযুক্ত ঝাঁটার প্রভাবে রসিকদাদু উঠে দাঁড়ালেন। পিঠে বুকে সর্বাঙ্গে তার ঝাঁটার কাঠি ফুটে চিনচিনে জ্বালা। রসিকদাদু বিচক্ষণ মানুষ, তিনি জানেন এসময় বটেশ্বরের বিরোধিতা করলে বটেশ্বর স্বমহিমা বজায় রাখতে আবার আসুরিক চিকিৎসা শুরু করবে, তাই তিনি এমন ভাব করলেন যেন এইমাত্র একডজন প্রেতাত্মা তার শরীর থেকে বেরিয়ে গেল।
রসিকদাদু বললেন, "আমি কোথায় ?"
বটেশ্বর ধুনুচিতে শুকনো লঙ্কা দিতে যাচ্ছিল কিন্তু রসিকদাদুর আচমকা সুস্থ্য হয়ে যাওয়াতে সে লঙ্কাগুলো নামিয়ে রাখল। তারপর একগাল হেঁসে সবার উদ্দেশ্যে বলল, " দেখলেন তো সবাই, এই বটেশ্বর ওঝাকে ভয় পায় না এমন ভুত ভূভারতে নেই। চলুন এবার ডাক্তারের চিকিৎসা করি। "
সবাই চলল উৎসাহী হয়ে। আশ্রমের একটা ঘরে একপাশে হাতমুখ বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে চেয়ারম্যান হয়ে বসে আছে রজত উকিলের একমাত্র বংশপ্রদীপ শ্রীমান সাহেব। আর সাহেবের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পঞ্চানন ডাক্তারের মেয়ে তিন্নি। সাহেবের দৃষ্টিও অপলক।
ঘরের আরেকদিকে স্টেথস্কোপ গলায় প্লাস্টার-অফ-প্যারিসের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পঞ্চানন ডাক্তার। বটেশ্বর প্রথমে তিন্নি আর সাহেবের কাছে এসে একবার সাহেবের দিকে তো একবার তিন্নির দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। তারপর চোখ কচলে মেঝেতে বসে পড়ল। একটু ধাতস্থ হয়ে বলল, " উচাটন। এর কাটানও আমার কাছে আছে, তবে পরে। আগে ডাক্তারবাবুকে চেকআপ করি।"
বটেশ্বর এতদিনে কোন ডাক্তার পেশেণ্ট পেয়েছে, তাই সে ডাক্তারি কায়দায় চেকআপের জন্যে পঞ্চানন ডাক্তারের স্টেথস্কোপটি গলা থেকে খুলতে গেল। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি। সাপবাবাজী পঞ্চানন ডাক্তারের আশ্রয় ত্যাগ করে বটেশ্বরের আলখাল্লার ভেতরে ঢুকে গেল। একটানা দাঁড়িয়ে থাকা, আতঙ্ক আর অনিদ্রায় পঞ্চানন ডাক্তার মাটিতে পড়েই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সবাই তাকে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে গেল শুশ্রূষার জন্যে।
বটেশ্বর হাতের ভঙ্গি করে করে নানান নৃত্যের নমুনা দেখাতে লাগলো। উপস্থিত দর্শকদের হাততালিও পড়ল। বটেশ্বরের নৃত্যপটুতা আমজনতার ভালো লাগলেও হাতিডোবা গ্রামের মাতব্বরদের ভালো লাগলো না। তারা এসবকিছুতেই অলীকপুরের অসাধু পরিকল্পনার ইঙ্গিত পেলেন।
সুভাষখুঁড়ো বললেন, "আর নয়, জল নাকের উপরে চলে গেছে। এবার কিছু একটা করতে হবে।"
রসিকদাদু একটু সুস্থ্য হয়েছেন। তিনি এখনও সাপের ব্যাপারটা মামুলি বলে মেনে নিতে পারছেন না। তার দৃঢ় বিশ্বাস অলীকপুরের কুচুটেগুলো তার বুড়ো হাড়ে সর্পবাণ মেরেছে। নেহাত দুধ-ঘি খাওয়া ব্যায়ামলব্ধ শরীর তাই কাবু করে উঠতে পারেনি। একজন কমবয়সি ছোকরা শুধু বলেছিল, "দাদু, তোমার বাড়িতে দুধ-ঘি কবে হতে হয় ? ঠাকমা তো তোমার জন্য দুবেলা গাঁদাল পাতার ঝোল রাঁধে।"
রসিকদাদু লাফিয়ে উঠে গালাগালি দিয়ে দিয়ে বললেন, "তোর এত পাকামো কেন রে ! আমি কি খাই কি না খাই তার হিসেব তোকে দেব। পাজী গর্দভ....."
সুভাষখুঁড়ো বললেন, "রসিকখুঁড়ো, আমাদের উচিত হবে অলীকপুর আক্রমণ করা। "
সুভাষখুঁড়োর কথায় কর্ণেল সরকার সন্মতি প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন, "আক্রমণ হবে গেরিলা কায়দায়। আমি সামনে থাকব। ভারত-চিন যুদ্ধে যেমনভাবে লড়াই করেছিলাম তেমনি লড়ব। জীবন যায় যাক, সন্মান ...কভি নেহি।"
কর্ণেল সরকারের রণং দেহি মনোভাবে হাতিডোবার সকলে অনেকটাই অক্সিজেন পেল। তারা মহাভারতীয় কায়দায় কর্ণেল সরকারকে সেনাপতি হিসেবে মনোনীত করলেন। মহান্তজী হলেন উপসেনাধ্যক্ষ -- অবশ্যই পদাধিকার বলে। হাতিডোবা গ্রামে মহান্তজীর একগুঁয়েমি সর্বজনবিদীত। ইতিহাসেও তার মতো চরিত্র আছে, যাদের জেদের কাছে অনেক সম্ভাবনা ও প্রতিভা নষ্ট হয়ে গেছে। যাইহোক এটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
মহান্তজী উপসেনাধ্যক্ষ হয়েই কর্ণেল সরকারের ডানা ছাঁটলেন। বললেন, "কর্ণেল বাবা খুব গরম মাথার লোক, ওর সব কথা তোমরা ধরো না বাবারা। আমি বলছিলাম কি..."
মহান্তজীর কথা শেষ হবার আগেই সভাস্থ একজন লাফিয়ে উঠে বলল, " ওসব প্রেম বিলিয়ে হবে না প্রভূ, প্রেম বিলোতে হলে অলীকপুরে মায়া ঠাকুমার কাছে প্রেম বিলোন। আমরা পরমাণু হামলা চাই।"
মহান্তজী রাগে গজগজ করতে লাগলেন। রসিকদাদু বললেন," পরমাণু মানে অ্যাটম বোম ! তা তোমরা পারো বাবা। ইস্কুলের গণ্ডিটা না পেরোনোর এই এক ঝামেলা।"
কর্ণেল সরকার বললেন," ওসব ছাড়ুন তো ! এবার কাজের কথায় আসা যাক। আমরা আজ রাত্রে অলীকপুরে হানা দেব গেরিলা কায়দায়। রজত রায়, অবিনাশ ঘোষ সহ দু'চারজন অলীকপুরের মাতব্বরকে বেঁধে আনলেই কাজ। এবার আমরা শর্ত দেব আত্মসমর্পণ করতে। তাছাড়া যা দাবিদাওয়া সবকিছু আদায় করে নেব।"
মহান্তজী বললেন," যা ভালো বোঝো করো, কিছু হলে আমাকে বলো না। "
রসিকদাদু বললেন," আপনি ভজন সাধন করুন মহারাজজী। সঠিক সময় হলে আপনার ভবনে রথ পৌঁছে যাবে। আপনাকে ছাড়া অভিযান অসম্পূর্ণ। "
রসিকদাদুর কথায় মহান্তজী রাগে গজগজ করতে করতে সভা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। এই ঘটনায় কারোর কোনো আফসোস হল বলে মনে হল না। সবাই পরবর্তী আলোচনায় মনোনিবেশ করল।
কর্ণেল সরকার বললেন," সাহেবকে চাপ দিয়ে পজিশনগুলো জেনে নিতে হবে। অনেক তথ্য চাই। বাকি তথ্য সরবরাহ করবে শ্রীকান্ত দাস। ও আজবপুরের লোক, আর ভিক্ষা করতে যায় অলীকপুরে।" সভা তখনকার মতো শেষ হলো।
No comments:
Post a Comment