জৈষ্ঠ্যের শেষ হব হব করছে, আকাশে বাতাসে চারদিকে শুধু পাকা কাঁঠালের গন্ধ। বিশ্বসংসারে এই একটিমাত্র ফলই আছে যার ফ্লেভার ভদ্রসমাজে অপাংক্তেয়। তবুও কিছু উৎসাহী মাছির ঝাঁক ভদ্রলোকের সেন্টিমেন্টকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাঁঠালের ভুঁতির উপর দিব্যি ভনভন করছে। কিছুটা দূরে একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে একটা বীর হনুমান বেশ গুলতুনি মারছিল। উৎসাহি লোকেদের দেওয়া চা-বিস্কুটে যখন পেটটা বেশ ভরে এসেছিল ঠিক তখনই হনুর মাথার পোকাগুলো নড়ে উঠল। হনুমান একঝাঁপে চড়ে বসল দোকানের টিনের ছাদে।
ত্রেতা যুগে হনুমান লঙ্কা পুড়িয়েছিল, কিন্তু আজ আর সেটা হল না। হাজার হোক কলিকাল, সবকিছুই উল্টো। তপ্ত টিনে পশ্চাৎদেশ পড়ামাত্র একটা হুপ্ শব্দে হুঙ্কার শোনা গেল। এটা হুঙ্কার না আর্তস্বর তা বলতে পারবো না তবে পশ্চাৎদেশ পুড়ে যে লঙ্কাপোড়া হয়ে গেছে সেটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।
ঘটনার আকস্মিকতায় হনুমানটি যথেষ্ট ঘাবড়ে গেলেও একেবারে ভেঙ্গে পড়েনি। ছাদ থেকে নেমে সোজা নতুনপুকুরের জলে। এসব দেখে আর সকলে হাসাহাসি করলেও আমাদের ভীস্মখুঁড়োর কোনো বিকার লক্ষ্য করা গেল না। ভীস্মখুঁড়ো গালে হাত দিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
বলে রাখা ভালো ভীস্মখুঁড়োর আসল নাম কিন্তু ভীস্ম নয়। আর তিনি কোনোকালেই ভীস্মের মতো বিয়ে না করার ভীষণ প্রতিজ্ঞা করেননি। বরং এই তিন কুড়ি দুই বছর বয়সেও বিয়ের আশা রাখেন। এহেন ভীস্মখুঁড়ো সবসময়ই বিয়ের চিন্তায় ব্যস্ত থাকেন। পাড়ার কলেজে পড়া মেয়ে দিয়া ইদানিং নাকি খুঁড়োর দিকে একটু ঝুঁকেছে। আরে না না, আমি বলছি না, - খুঁড়োই বলেছেন। সেদিন চায়ের দোকানে কয়েকটা উঠতি ছেলেছোকরা ঘিরে ধরল খুঁড়োকে। খুঁড়ো গল্পের জাহাজ, কিন্তু সহজে তো গল্প বলার লোক তিনি নন। তাই অগত্যা টোপ দেওয়া হল।
একজন হিপিমার্কা ছোকরা বলল, "দিনদিন কি হচ্ছে বলতো খুঁড়ো, হাজার হাজার বেকার চাকরি নেই। আর চাকরি না হলে বিয়েও হবার জো নেই। মেয়ের বাবারা সব ধনুকভাঙ্গা পণ করে বসে আছে চাকরিওয়ালা ছেলে ছাড়া মেয়ে দেবে না।"
খুঁড়ো খাপ্পা হয়ে বললেন, "ম্যালা বকিস না তো ! মেয়ে দেবে না মানে। আমার কত সম্পত্তি তুই জানিস ! তারিণীচরণের বাপ দেবে মেয়ে। "
তারিণীচরণ গাঙ্গুলি দিয়ার বাবা। একদিন পাড়ার ছেলেরা দল বেঁধে তাদের দিয়াদিদির কাছে আবদার করে যে বুড়োকে একটু বমকে দিতে হবে। দিয়া প্রথমে রাজি না হলেও পরে শর্তসাপেক্ষে রাজি হয়েছিল। শর্তটা এই যে সামনের সরস্বতী পুজোর কালচারাল ফাংশানে ওকে অ্যাংকারিং করতে দিতে হবে। ছেলেরা রাজি। তারপরই শুরু হয়ে গেল অপারেশন ভীস্মখুঁড়ো।
ভীস্মখুঁড়ো একেই বিয়েপাগল মানুষ তার উপর অষ্টাদশীর হাতছানি, - বাস খেল খতম। এখন কিছু প্রয়োজন হলেই পাড়ার ছেলেরা ভীস্মখুঁড়োর দরবারে হাজির। ইনিয়ে বিনিময়ে বিয়ের আলোচনা, তারিণীচরণের মুণ্ডপাত আর তার পরেই ভীস্মখুঁড়ো গলে জল।
তো সেদিন ভীস্মখুঁড়োকে চিন্তিত দেখে ঘন্টা তার পাশটাতে বসল। ঘন্টাকে দেখে খুঁড়ো আজ আর তেমন পাত্তা দিলেন না। ঘন্টাও ছাড়বার পাত্র নয়, সে এঁটোলির মতো খুঁড়োর পেছনে লেগে রইল। খুঁড়ো একবার টিনের ছাদের দিকে আর একবার বেঞ্চের দিকে তাকাচ্ছেন। অবশেষে একদম লাফিয়ে উঠলেন তিনি।
"ক্যানসেল !ক্যানসেল !"
ঘন্টা অবাক হয়ে খুঁড়োর দিকে চেয়ে বলল, "কি ক্যানসেল খুঁড়ো !"
ভীস্মখুঁড়ো উত্তেজিত গলায় বলল, "ধর্না ক্যানসেল। ভেবেছিলাম তারিণীচরণের দরজায় ধর্ণা দেবো 'আমার বৌ ফিরিয়ে দাও' প্ল্যাকার্ড নিয়ে, কিন্তু না। এই গরমে ধর্ণা দিয়ে বেগুনপোড়া হবার ইচ্ছা আমার নেই। ভাগ্যিস ব্যাটা মুখপোড়ার পাছা পুড়েছিল নইলে কি হত বল দেখিনি। তবে ধর্ণা হবে,... আগামী ডিসেম্বরে।"
No comments:
Post a Comment