- না আর এই মেয়েছেলের সাথে ঘর করতে পারবো না। চললাম আমি যেদিকে দু'চোখ যায়।
- যা না যে দিকে যাবি যা। হে মা কালী মুখপোড়াকে এবার নাও মা।
বাস, আর দাঁড়াল না সদানন্দ, হনহন করে বেরিয়ে গেল ঘর হতে। খিদের জ্বালা উঠলে শান্তিময়ীকে মনে পড়েনি তা নয় কিন্তু পুরুষাকার বলে কথা। শান্তিময়ী কিন্তু আর সদানন্দকে তেল মারেনি। এদিকে সদানন্দ শ্মশানে তন্ত্র সাধনায় মন দিল। জটাজুট ধারন করে লাল কাপড় আর কপালে লাল টকটকে সিঁদুরের ফোঁটা নিয়ে সদানন্দ হল শ্রী শ্রী ১০৮ স্বামী কৃতান্ত কান্ত অবধূত ওরফে কৃতান্ত তান্ত্রিক।
কৃতান্ত তান্ত্রিকের সব জুটলেও গলাটা একেবারে ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। সাধু মানুষ, তাতে আবার অতবড় তান্ত্রিক তার গলায় মালা নেই ! এ হতেই পারে না। অবশ্য কথাটা তাকে বলেছিল বিশুকাকা। সেবার হরনাথ ঘোষালের বাড়িতে নোংরাভর্তি কলসি ভেঙে পালিয়ে আসার পথে তাড়া খায় বিশুকাকা অ্যান্ড কোম্পানি। পরিমরি করে দৌড়াতে থাকে তারা। বর্ষা ছাড়া নদীতে প্রায় সারাবছরই জল কম থাকে। ফলে নদী পার হয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করতে খুব বেগ পেতে হল না।
সেবার টানা সাতদিন কৃতান্তের অতিথি হয়ে ছিলেন বিশুকাকা। কৃতান্ত কিন্তু খুব অতিথিবৎসলতা দেখায়নি। সে বলেছিল, "কাকা, তুমিও মরবে আর আমাকেও মারবে। আর লুকোনোর জায়গা পেলে না ?"
- দেখ সদা, বেশি ফ্যাচ ফ্যাচ করবি না। যাব তোর বৌয়ের কাছে ? কৃতান্তগিরি ঘুচে যাবে।
- "দোহাই কাকা যতদিন খুশি তুমি থাক। আর আমাকে বিপদে ফেলো না।" কাতর আবেদন জানায় কৃতান্ত।
যাবার সময় অযাচিত ভাবে বিশুকাকার উপদেশামৃত বর্ষিত হয়," শোন সদা, তান্ত্রিক হয়েছিস ভালো কিন্তু সবসময় জাকজমকে থাকবি। গলায় গোটা তিনেক রুদ্রাক্ষের মালা নে। হাড়ের মালা হলেও ভালো হয়। আর খড়ম পরতে শুরু কর। দেখবি খদ্দের লাইন লাগিয়ে দেবে।"
৪
জঙ্গলে কৃতান্ত ছাড়াও থাকে দুই প্রেত। বহুযুগ আগে এরাও ছিল আজবপুরের বাসিন্দা। দুজনে থাকত গ্রামের দুই প্রান্তে। দুজনের মধ্যে ছিল খুব ভাব। একজন কিছু খাবার পেলে অন্যজনকে না দিয়ে খেত না। সারাদিন দুজনে জোট বেঁধে কারোর নর্দমা পরিস্কার তো কারোর বাগানের আগাছা পরিস্কার করে দুপাঁচ টাকা আয় ইনকাম করত। আর সময় পেলে মানুষের পেছনে লেগে জীবন তীতিবিরক্ত করে তুলত ।
একবার বাঁকুড়া হতে রামায়ণ পাঠ করতে এসেছেন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ। সাদা দাড়ি, পরনে সাদা ধুতি ও ফতুয়া। ফতুয়ার নিচ হতে সাদা উপবীত দেখা যাচ্ছে। বহু পথশ্রমে ক্লান্ত ব্রাহ্মণ আজবপুরে এসে পৌঁছলেন তখন সূর্য মধ্যগগণে। গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপের আটচালাতে স্হান পেলেন তিনি। রান্নার সব সরঞ্জাম এসে পৌঁছল। আর সঙ্গে এলেন দুই মূর্তিমান।
খোশগল্প করতে করতে দুজনে পটিয়ে ফেললেন বৃদ্ধকে। রাতে রামায়ণ পাঠ হবার পর খাওয়া দাওয়া করে তিনি যেই ঘুমোতে যাবেন অমনি দুইজনে হাজির।
- ঘুমিয়ে পড়লেন ঠাকুর ?
- কে বাবা ? ও তোমরা। কিছু বলবে বাপ ?
- "হেঁ হেঁ হেঁ......" দুজনে তাদের পেটেন্ট করা হাঁসির প্রদর্শন করে। "বলছিলাম কি ঠাকুর আনেক ধকল গেছে তো, তা আমরা দুজনে পদসেবা যদি করে দি..... ব্রাহ্মণ সেবার পূণ্য হতে বঞ্চিত করবেন না ঠাকুর।"
- তোরা খুব ভালো ছেলে। এ যুগে তোদের মতো ছেলে পাওয়া ভার বাবা। বড় হও, অনেক উন্নতি কর।
- "আসার পথে বৌ বললে, যাচ্ছ যখন তখন এই অয়ুর্বেদিক তেলটাও নিয়ে যাও। খুব ভাল তেল ঠাকুর। এমন মালিশ করে দেবো না.... খুব আরাম পাবেন। কি বলিস মিলু। " লিলুর কথায় মাথা নেড়ে সায় দেয় মিলু।
তারপর দুজনে বৃদ্ধের দুটো পা নিয়ে মালিশ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃদ্ধ ঘুমিয়ে পড়েন। তার নাকের ডাক ঝিল্লির আওয়াজের সাথে পাল্লা দিতে থাকে।
সকালে উঠেই বৃদ্ধ হাত মুখ ধোবার জন্য যেই পুকুরের জলে নেমেছেন অমনি নজর গেল পায়ের উপর। একি ! একিকরে হল ! আর ধৈর্য্য রইলো না। তিনি গাল পাড়তে লাগলেন।
- মরবি, কেউ বাঁচবি না। ব্রাহ্মণের সাথে তামাশা !! ওরে পাজী গর্ভশ্রাব অনামুখো মরবি !
বৃদ্ধের গালাগালি শুনে গ্রামের সবাই হাজির। "কি হল ঠাকুর, গালি দিচ্ছ কেন ?" গ্রামের মোড়ল এসে দাঁড়ালেন।
- দেখ বাবা দেখ, কি করেছে দেখ। এরপর বল গাল দেব না আরতী করব।
মোড়ল যা দেখলেন তাতে তার চক্ষুস্থির। বৃদ্ধের দুটি পায়ে তেলকালি আর মোবিলের মিশ্রন বেশ পরিপাটি করে লাগানো হয়েছে। ধুতিটাও বাদ যায়নি।
বৃদ্ধের কথা শুনে যা বোঝা গেল তাতে আর গ্রামবাসীদের কোনো সংশয়ই থাকল না, - নিঃসন্দেহে একাজ লিলু-মিলুর। সঙ্গে সঙ্গে লোক ছুটলো গ্রামের বিভিন্নদিকে। কিন্তু লিলু-মিলু কই ? লিলু-মিলু তখন আশ্রয় নিয়েছে জঙ্গলের গভীরে।
- মিলুরে, আর ঘরে ফিরতে পারবো না ভাই !
- সত্যি বলেছিস লিলু। এই জঙ্গলে বাঘের অভাবও নেই।
- হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. হ্যাঁচচৌ....
- "কি হল রে মিলু ?" লিলু জিজ্ঞেস করে। তার নাকে একটা বদখত গন্ধ আসে।
- কি যেন একটা নাকের ডগায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে !
- সাপ নয়তো। এ জঙ্গলে সাপের কমতি নেই। আ.. আ.. আমার গালেও কি যেন ঠান্ডা ঠান্ডা....
"বা.... আ.. আ....." বলে চিৎকার করতে করতে দুজনেই মারে ছুট। বন জঙ্গল পেরিয়ে খানা ডোবা ডিঙিয়ে ছুটতে থাকে তারা। সঙ্গে থাকা জন্তুটিও ছুটতে থাকে প্রাণের ভয়ে।
আসলে হয়েছিল কি একটা বাঘ নদী পার হয়ে ঢুকেছিল আজবপুরে। হারু দাসের গোয়ালে ঢুকে সে বুঝতে পারে যে গরু নেহাৎ নিরীহ প্রাণী হলেও সহজবধ্য নয়। দু'চার গুঁতো খেয়ে শার্দুলবাবাজী সটান গোয়ালের বাইরে। এরপর ছাগলের গোয়ালেও বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে একটা মুরগি মুখে করে দে দৌড়।
- যা না যে দিকে যাবি যা। হে মা কালী মুখপোড়াকে এবার নাও মা।
বাস, আর দাঁড়াল না সদানন্দ, হনহন করে বেরিয়ে গেল ঘর হতে। খিদের জ্বালা উঠলে শান্তিময়ীকে মনে পড়েনি তা নয় কিন্তু পুরুষাকার বলে কথা। শান্তিময়ী কিন্তু আর সদানন্দকে তেল মারেনি। এদিকে সদানন্দ শ্মশানে তন্ত্র সাধনায় মন দিল। জটাজুট ধারন করে লাল কাপড় আর কপালে লাল টকটকে সিঁদুরের ফোঁটা নিয়ে সদানন্দ হল শ্রী শ্রী ১০৮ স্বামী কৃতান্ত কান্ত অবধূত ওরফে কৃতান্ত তান্ত্রিক।
কৃতান্ত তান্ত্রিকের সব জুটলেও গলাটা একেবারে ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। সাধু মানুষ, তাতে আবার অতবড় তান্ত্রিক তার গলায় মালা নেই ! এ হতেই পারে না। অবশ্য কথাটা তাকে বলেছিল বিশুকাকা। সেবার হরনাথ ঘোষালের বাড়িতে নোংরাভর্তি কলসি ভেঙে পালিয়ে আসার পথে তাড়া খায় বিশুকাকা অ্যান্ড কোম্পানি। পরিমরি করে দৌড়াতে থাকে তারা। বর্ষা ছাড়া নদীতে প্রায় সারাবছরই জল কম থাকে। ফলে নদী পার হয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করতে খুব বেগ পেতে হল না।
সেবার টানা সাতদিন কৃতান্তের অতিথি হয়ে ছিলেন বিশুকাকা। কৃতান্ত কিন্তু খুব অতিথিবৎসলতা দেখায়নি। সে বলেছিল, "কাকা, তুমিও মরবে আর আমাকেও মারবে। আর লুকোনোর জায়গা পেলে না ?"
- দেখ সদা, বেশি ফ্যাচ ফ্যাচ করবি না। যাব তোর বৌয়ের কাছে ? কৃতান্তগিরি ঘুচে যাবে।
- "দোহাই কাকা যতদিন খুশি তুমি থাক। আর আমাকে বিপদে ফেলো না।" কাতর আবেদন জানায় কৃতান্ত।
যাবার সময় অযাচিত ভাবে বিশুকাকার উপদেশামৃত বর্ষিত হয়," শোন সদা, তান্ত্রিক হয়েছিস ভালো কিন্তু সবসময় জাকজমকে থাকবি। গলায় গোটা তিনেক রুদ্রাক্ষের মালা নে। হাড়ের মালা হলেও ভালো হয়। আর খড়ম পরতে শুরু কর। দেখবি খদ্দের লাইন লাগিয়ে দেবে।"
৪
জঙ্গলে কৃতান্ত ছাড়াও থাকে দুই প্রেত। বহুযুগ আগে এরাও ছিল আজবপুরের বাসিন্দা। দুজনে থাকত গ্রামের দুই প্রান্তে। দুজনের মধ্যে ছিল খুব ভাব। একজন কিছু খাবার পেলে অন্যজনকে না দিয়ে খেত না। সারাদিন দুজনে জোট বেঁধে কারোর নর্দমা পরিস্কার তো কারোর বাগানের আগাছা পরিস্কার করে দুপাঁচ টাকা আয় ইনকাম করত। আর সময় পেলে মানুষের পেছনে লেগে জীবন তীতিবিরক্ত করে তুলত ।
একবার বাঁকুড়া হতে রামায়ণ পাঠ করতে এসেছেন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ। সাদা দাড়ি, পরনে সাদা ধুতি ও ফতুয়া। ফতুয়ার নিচ হতে সাদা উপবীত দেখা যাচ্ছে। বহু পথশ্রমে ক্লান্ত ব্রাহ্মণ আজবপুরে এসে পৌঁছলেন তখন সূর্য মধ্যগগণে। গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপের আটচালাতে স্হান পেলেন তিনি। রান্নার সব সরঞ্জাম এসে পৌঁছল। আর সঙ্গে এলেন দুই মূর্তিমান।
খোশগল্প করতে করতে দুজনে পটিয়ে ফেললেন বৃদ্ধকে। রাতে রামায়ণ পাঠ হবার পর খাওয়া দাওয়া করে তিনি যেই ঘুমোতে যাবেন অমনি দুইজনে হাজির।
- ঘুমিয়ে পড়লেন ঠাকুর ?
- কে বাবা ? ও তোমরা। কিছু বলবে বাপ ?
- "হেঁ হেঁ হেঁ......" দুজনে তাদের পেটেন্ট করা হাঁসির প্রদর্শন করে। "বলছিলাম কি ঠাকুর আনেক ধকল গেছে তো, তা আমরা দুজনে পদসেবা যদি করে দি..... ব্রাহ্মণ সেবার পূণ্য হতে বঞ্চিত করবেন না ঠাকুর।"
- তোরা খুব ভালো ছেলে। এ যুগে তোদের মতো ছেলে পাওয়া ভার বাবা। বড় হও, অনেক উন্নতি কর।
- "আসার পথে বৌ বললে, যাচ্ছ যখন তখন এই অয়ুর্বেদিক তেলটাও নিয়ে যাও। খুব ভাল তেল ঠাকুর। এমন মালিশ করে দেবো না.... খুব আরাম পাবেন। কি বলিস মিলু। " লিলুর কথায় মাথা নেড়ে সায় দেয় মিলু।
তারপর দুজনে বৃদ্ধের দুটো পা নিয়ে মালিশ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃদ্ধ ঘুমিয়ে পড়েন। তার নাকের ডাক ঝিল্লির আওয়াজের সাথে পাল্লা দিতে থাকে।
সকালে উঠেই বৃদ্ধ হাত মুখ ধোবার জন্য যেই পুকুরের জলে নেমেছেন অমনি নজর গেল পায়ের উপর। একি ! একিকরে হল ! আর ধৈর্য্য রইলো না। তিনি গাল পাড়তে লাগলেন।
- মরবি, কেউ বাঁচবি না। ব্রাহ্মণের সাথে তামাশা !! ওরে পাজী গর্ভশ্রাব অনামুখো মরবি !
বৃদ্ধের গালাগালি শুনে গ্রামের সবাই হাজির। "কি হল ঠাকুর, গালি দিচ্ছ কেন ?" গ্রামের মোড়ল এসে দাঁড়ালেন।
- দেখ বাবা দেখ, কি করেছে দেখ। এরপর বল গাল দেব না আরতী করব।
মোড়ল যা দেখলেন তাতে তার চক্ষুস্থির। বৃদ্ধের দুটি পায়ে তেলকালি আর মোবিলের মিশ্রন বেশ পরিপাটি করে লাগানো হয়েছে। ধুতিটাও বাদ যায়নি।
বৃদ্ধের কথা শুনে যা বোঝা গেল তাতে আর গ্রামবাসীদের কোনো সংশয়ই থাকল না, - নিঃসন্দেহে একাজ লিলু-মিলুর। সঙ্গে সঙ্গে লোক ছুটলো গ্রামের বিভিন্নদিকে। কিন্তু লিলু-মিলু কই ? লিলু-মিলু তখন আশ্রয় নিয়েছে জঙ্গলের গভীরে।
- মিলুরে, আর ঘরে ফিরতে পারবো না ভাই !
- সত্যি বলেছিস লিলু। এই জঙ্গলে বাঘের অভাবও নেই।
- হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. হ্যাঁচচৌ....
- "কি হল রে মিলু ?" লিলু জিজ্ঞেস করে। তার নাকে একটা বদখত গন্ধ আসে।
- কি যেন একটা নাকের ডগায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে !
- সাপ নয়তো। এ জঙ্গলে সাপের কমতি নেই। আ.. আ.. আমার গালেও কি যেন ঠান্ডা ঠান্ডা....
"বা.... আ.. আ....." বলে চিৎকার করতে করতে দুজনেই মারে ছুট। বন জঙ্গল পেরিয়ে খানা ডোবা ডিঙিয়ে ছুটতে থাকে তারা। সঙ্গে থাকা জন্তুটিও ছুটতে থাকে প্রাণের ভয়ে।
আসলে হয়েছিল কি একটা বাঘ নদী পার হয়ে ঢুকেছিল আজবপুরে। হারু দাসের গোয়ালে ঢুকে সে বুঝতে পারে যে গরু নেহাৎ নিরীহ প্রাণী হলেও সহজবধ্য নয়। দু'চার গুঁতো খেয়ে শার্দুলবাবাজী সটান গোয়ালের বাইরে। এরপর ছাগলের গোয়ালেও বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে একটা মুরগি মুখে করে দে দৌড়।
No comments:
Post a Comment