এবার মুখ খুললেন অবিনাশ ঘোষ , " আলঝাইমার হয়েছে মশাই, এ রোগ আমার মাসতুতো দাদার শালার... "
রজত রায় মাঝ পথে বাধ দিয়ে বললেন ," ছাড়ুন আপনার মাসতুতো দাদার শালা, ডাক্তার কি মুখ দেখতে এনেছি ! ডাক্তারবাবু, দেখুন একটু ভালোকরে ব্যাটা হনুমান গেল কি রইল। "
হরি ডাক্তার রোগীর কাছে গিয়ে ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করলেন। রোগী প্রথমে নার্ভস দেখাতে চাইল না, কিন্তু হরি ডাক্তার জেদী মানুষ তিনি জোর করে চাকলাদারের কব্জিটা টেনে নিয়ে নার্ভস পরীক্ষা করলেন।
এরপর হরি ডাক্তার গম্ভীর হয়ে বললেন," না, নার্ভস খুব চঞ্চল। বড় কোন রোগ না হয়ে যায় না।"
অবিনাশ ঘোষ জিজ্ঞাসা করলেন , "ডাক্তারবাবু, কি রোগ কিছু বুঝতে পারলেন !"
হরি ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দিলেন, "সে জেনে তুমি কি করবে বাপু।"
নাছোরবান্দা অবিনাশ ঘোষ বললেন , "তাও বলুন শুনি।"
হরি ডাক্তার স্টেথস্কোপটি কান থেকে নামিয়ে বললেন," সিটিস্কপ। "
রজত রায় বললেন ," আরেকবার ভালোকরে দেখুন ডাক্তারবাবু। "
হরি ডাক্তার স্টেথস্কোপটি আবার কানে পরে নিয়ে চাকলাদারের কাছে গেলেন। ভালোকরে পরীক্ষা করতে শুরু করলেন চাকলাদারকে। চোখের পাতা আঙুল দিয়ে প্রসারিত করে পরীক্ষা করলেন। রোগীকে জিভ দেখাতে বললেও রোগী তা শুনল না।
হরি ডাক্তার যেই না স্টেথস্কোপটি চাকলাদারের বুকের উপর রেখেছেন অমনি একটা হাতখানেক লম্বা সাপ চাকলাদারের জামার ভেতর থেকে বেরিয়ে ভায়া স্টেথস্কোপ হরি ডাক্তারের পাঞ্জাবির ভেতরে ঢুকে গেল। চাকলাদার এক ছুটে আটচালা থেকে নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আর হরি ডাক্তার চাকলাদারের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শি শি করতে লাগলেন।
উপস্থিত সবাই দেখেশুনে হকচকিয়ে গেল। হরি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে অবিনাশ ঘোষ বললেন , " ডাক্তারবাবু ! বলি ও ডাক্তারবাবু ! আছেন না টেঁশে গেলেন ?"
হরি ডাক্তার চিঁ চিঁ করে কি বললেন বোঝা গেল না। অবিনাশ ঘোষ হরি ডাক্তারের কাছে গেলেও খুব কাছে গেল না। তার ভয় হল যে চাকলাদারের থেকে হরি ডাক্তারের রোগসংক্রমণ হয়েছে, যদি তারও কিছু হয়ে যায় !
রজত রায় বললেন ," একবার হাতিডোবার পঞ্চানন বটব্যালকে ডাকলে হয়। শুনেছি সে একদম ধন্বন্তরি।"
অবিনাশ ঘোষ বললেন , "কিন্তু উকিলবাবু, পঞ্চানন ডাক্তার কি আসবে ? আপনি তো জানেনই হাতিডোবার লোকেরা আমাদের অলীকপুরের লোকেদের খুব একটা সহ্য করতে পারে না। তারপরেও আপনি আশা রাখেন ?"
রজত রায় বললেন ," তোমরা ডাক্তারবাবুর দিকে নজর রাখ, আমি আসছি। " এই বলে কালবিলম্ব না করে রজত রায় বাড়ির দিকে পা বাড়াল।
- - ৩--
উকিল রজত রায়ের বাড়ি। রজত রায়ের ছেলে সাহেব, সামনেই কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা তার। বই নিয়ে বসে আছে, কিন্তু পড়াশোনায় বিন্দুমাত্র মন নেই। সামনেই অলীকপুরের যাত্রানুষ্ঠান। বাপের কাছে আবদার করেছিল একটা পার্টের। টাকা নয়, পয়সা নয়, সামান্য একটা পার্ট - - তাও দিল না। মুখ ব্যাজার করে পড়তে লাগল বাংলা সাহিত্যে লোকশিল্পের অবদান ।
ঠিক এসময় হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকলেন উকিলবাবু। বাড়িতে ঢুকেই হাঁক পড়লেন, " সাহেব ..সাহেব ! , কই রে.. গেলি কোথায় ?
ঘরের ভেতর থেকে সাহেবের উত্তর এল," পড়ছি। কেন কি হল ? ভটচাজ্ কাকাকে ডাকতে যেতে হবে তো !... ও আমি পারব না। "
রজত রায় ঘরের ভেতরে ঢুকেই ছেলের কানে একটা রামমোচড় দিয়ে বললেন," লেখা পড়া শিখিয়ে তোমাকে এই মানুষ করছি ! বাপের মুখের উপর না বলা !" এরপর কানটা ছেড়ে দিয়ে গলা একটু নরম করে বললেন, " একটু হাতিডোবায় যেতে হবে, পঞ্চানন ডাক্তারের কাছে। টর্চটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ো।"
অন্যদিন হলে সাহেব বাবার মুখের উপর না বলে দিত, কিন্তু আজ সে নাসূচক কোনো কথাই মুখে আনল না। কারনটা হল তিন্নি। পঞ্চানন ডাক্তাররের মেয়ে তিন্নি। সাহেবের ভারি পছন্দ তিন্নিকে। তিন্নি অবশ্য এখনো হ্যাঁ বলেনি তবুও সাহেবের মনে আশা আছে যে তিন্নি একদিন ওকে হ্যাঁ বলবেই ।
পিতার আদেশ শিরোধার্য করে উকিল বাপের শ্রবণকুমার সন্তান বেরিয়ে পড়লেন হাতিডোবার উদ্দেশ্যে । হাতিডোবা হতে অলীকপুর বেশিদূর নয়। খুব বেশি হলে আড়াই কিলোমিটার। তবুও এই অল্প রাস্তাটুকুও সাহেবের কাছে অনন্ত পথ বলে বোধ হল। তার মনে শুধু একটাই বাসনা, একটাই কামনা - - তিন্নিকে একঝলক দেখতে পাওয়া। হাতিডোবা আর অলীকপুরের মধ্যে যা শত্রুতা তাতে তাদের ভালবাসাকে ভালচোখে দেখবে এমন মানুষ দুই গ্রামে নেই।
সাহেব ছুটে চলেছে, - হাতে তার তিন সেলের টর্চ। কিছুদূর যাবার পর ব্রিজের কাছে সাহেব থেমে গেল। ব্রিজটি একটা ক্যানেলের উপরে নির্মিত হয়েছে। ব্রিজ পেরিয়েই সাহেবের মনে হল কেউ যেন পাশের ঝোপ হতে তাকে লক্ষ্য করছে। সাহেব রাস্তা হতে একটা আধলা ইঁট তুলে নিয়ে ঝোপের দিকে ছুড়ে মারল। সহসা একটা আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভরে উঠল । পাশের গাছটিতে ঘুমন্ত বকগুলো জেগে উঠে কলরব জুড়ে দিল। কেউ কেউ তো আবার বাঁসা ছেড়ে বেরিয়ে এসে কি ঘটল তার পরীক্ষায় মনোনিবেশ করল।
ঝোপ হতে বেরিয়ে এলেন জগদীশ দারোগা। দারোগাবাবু একটা চোরের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন। পথিমধ্যে গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি হেঁটেই অলীকপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। ব্রিজের কাছে আসতেই পেটটা গুড়গুড় করে ওঠে। তাই রাস্তার পাশের ঝোপেই বসে যান। পেট সাফ হবার আগেই সাহেব দারোগাবাবুর উপর হাত সাফ করে বসে।
দারোগাবাবু শরীরের অর্ধেকটা ঝোপের ভেতর রেখেই উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ওঠেন, " কে রে ! মাই কা লাল হলে এগিয়ে আয়। জগদীশ দারোগার সঙ্গে পাঙ্গা ভারি পড়বে রে হারামি !" আরো যা যা বলল তা শোনার মতো নয়। বিপদ বুঝে সাহেব টর্চ নিভিয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে চলল। পেছনে তখনও জগদীশ দারোগার চিল চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
কিছুটা এগিয়ে যেতেই দারোগাবাবুর গাড়িটা নজরে পড়ল সাহেবের। সাহেব দেখল ড্রাইভার সিটে বসে বসে ঘুমোচ্ছে। ড্রাইভারকে এড়িয়ে যাবার জন্য সাহেব মাঠে নেমে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার রাস্তায় উঠে এল সাহেব। হাতিডোবা গ্রামের শুরুতেই চণ্ডীমণ্ডপ। সাহেব চণ্ডীমণ্ডপের কাছাকাছি যেতেই একটা কাশির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়াল। চণ্ডীমণ্ডপের সামনে বসে থাকা কুকুরগুলোও একসাথে চেঁচাতে লাগল। সাহেব ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে হুশহাশ শব্দ করে কুকুরগুলোকে তাড়াবার চেষ্টা করতে লাগল ।
" কে যায় ? দেখতো সুভাষ, চোর ছ্যাঁচড় কিনা।" রসিকদাদু কাশতে কাশতে উঠে বসেন।
সুভাষখুঁড়ো অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসেন। তারপর মাথার কাছে থাকা তেলচকচকে লাঠিটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। রসিকদাদুও সুভাষখুঁড়োর সঙ্গ নিলেন। এরই মধ্যে অন্যরাও জেগে উঠেছে। সবাইকে একসাথে আসতে দেখে সাহেবের আত্মারাম খাঁচাছাড়া।
রজত রায় মাঝ পথে বাধ দিয়ে বললেন ," ছাড়ুন আপনার মাসতুতো দাদার শালা, ডাক্তার কি মুখ দেখতে এনেছি ! ডাক্তারবাবু, দেখুন একটু ভালোকরে ব্যাটা হনুমান গেল কি রইল। "
হরি ডাক্তার রোগীর কাছে গিয়ে ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করলেন। রোগী প্রথমে নার্ভস দেখাতে চাইল না, কিন্তু হরি ডাক্তার জেদী মানুষ তিনি জোর করে চাকলাদারের কব্জিটা টেনে নিয়ে নার্ভস পরীক্ষা করলেন।
এরপর হরি ডাক্তার গম্ভীর হয়ে বললেন," না, নার্ভস খুব চঞ্চল। বড় কোন রোগ না হয়ে যায় না।"
অবিনাশ ঘোষ জিজ্ঞাসা করলেন , "ডাক্তারবাবু, কি রোগ কিছু বুঝতে পারলেন !"
হরি ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দিলেন, "সে জেনে তুমি কি করবে বাপু।"
নাছোরবান্দা অবিনাশ ঘোষ বললেন , "তাও বলুন শুনি।"
হরি ডাক্তার স্টেথস্কোপটি কান থেকে নামিয়ে বললেন," সিটিস্কপ। "
রজত রায় বললেন ," আরেকবার ভালোকরে দেখুন ডাক্তারবাবু। "
হরি ডাক্তার স্টেথস্কোপটি আবার কানে পরে নিয়ে চাকলাদারের কাছে গেলেন। ভালোকরে পরীক্ষা করতে শুরু করলেন চাকলাদারকে। চোখের পাতা আঙুল দিয়ে প্রসারিত করে পরীক্ষা করলেন। রোগীকে জিভ দেখাতে বললেও রোগী তা শুনল না।
হরি ডাক্তার যেই না স্টেথস্কোপটি চাকলাদারের বুকের উপর রেখেছেন অমনি একটা হাতখানেক লম্বা সাপ চাকলাদারের জামার ভেতর থেকে বেরিয়ে ভায়া স্টেথস্কোপ হরি ডাক্তারের পাঞ্জাবির ভেতরে ঢুকে গেল। চাকলাদার এক ছুটে আটচালা থেকে নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আর হরি ডাক্তার চাকলাদারের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শি শি করতে লাগলেন।
উপস্থিত সবাই দেখেশুনে হকচকিয়ে গেল। হরি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে অবিনাশ ঘোষ বললেন , " ডাক্তারবাবু ! বলি ও ডাক্তারবাবু ! আছেন না টেঁশে গেলেন ?"
হরি ডাক্তার চিঁ চিঁ করে কি বললেন বোঝা গেল না। অবিনাশ ঘোষ হরি ডাক্তারের কাছে গেলেও খুব কাছে গেল না। তার ভয় হল যে চাকলাদারের থেকে হরি ডাক্তারের রোগসংক্রমণ হয়েছে, যদি তারও কিছু হয়ে যায় !
রজত রায় বললেন ," একবার হাতিডোবার পঞ্চানন বটব্যালকে ডাকলে হয়। শুনেছি সে একদম ধন্বন্তরি।"
অবিনাশ ঘোষ বললেন , "কিন্তু উকিলবাবু, পঞ্চানন ডাক্তার কি আসবে ? আপনি তো জানেনই হাতিডোবার লোকেরা আমাদের অলীকপুরের লোকেদের খুব একটা সহ্য করতে পারে না। তারপরেও আপনি আশা রাখেন ?"
রজত রায় বললেন ," তোমরা ডাক্তারবাবুর দিকে নজর রাখ, আমি আসছি। " এই বলে কালবিলম্ব না করে রজত রায় বাড়ির দিকে পা বাড়াল।
- - ৩--
উকিল রজত রায়ের বাড়ি। রজত রায়ের ছেলে সাহেব, সামনেই কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা তার। বই নিয়ে বসে আছে, কিন্তু পড়াশোনায় বিন্দুমাত্র মন নেই। সামনেই অলীকপুরের যাত্রানুষ্ঠান। বাপের কাছে আবদার করেছিল একটা পার্টের। টাকা নয়, পয়সা নয়, সামান্য একটা পার্ট - - তাও দিল না। মুখ ব্যাজার করে পড়তে লাগল বাংলা সাহিত্যে লোকশিল্পের অবদান ।
ঠিক এসময় হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকলেন উকিলবাবু। বাড়িতে ঢুকেই হাঁক পড়লেন, " সাহেব ..সাহেব ! , কই রে.. গেলি কোথায় ?
ঘরের ভেতর থেকে সাহেবের উত্তর এল," পড়ছি। কেন কি হল ? ভটচাজ্ কাকাকে ডাকতে যেতে হবে তো !... ও আমি পারব না। "
রজত রায় ঘরের ভেতরে ঢুকেই ছেলের কানে একটা রামমোচড় দিয়ে বললেন," লেখা পড়া শিখিয়ে তোমাকে এই মানুষ করছি ! বাপের মুখের উপর না বলা !" এরপর কানটা ছেড়ে দিয়ে গলা একটু নরম করে বললেন, " একটু হাতিডোবায় যেতে হবে, পঞ্চানন ডাক্তারের কাছে। টর্চটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ো।"
অন্যদিন হলে সাহেব বাবার মুখের উপর না বলে দিত, কিন্তু আজ সে নাসূচক কোনো কথাই মুখে আনল না। কারনটা হল তিন্নি। পঞ্চানন ডাক্তাররের মেয়ে তিন্নি। সাহেবের ভারি পছন্দ তিন্নিকে। তিন্নি অবশ্য এখনো হ্যাঁ বলেনি তবুও সাহেবের মনে আশা আছে যে তিন্নি একদিন ওকে হ্যাঁ বলবেই ।
পিতার আদেশ শিরোধার্য করে উকিল বাপের শ্রবণকুমার সন্তান বেরিয়ে পড়লেন হাতিডোবার উদ্দেশ্যে । হাতিডোবা হতে অলীকপুর বেশিদূর নয়। খুব বেশি হলে আড়াই কিলোমিটার। তবুও এই অল্প রাস্তাটুকুও সাহেবের কাছে অনন্ত পথ বলে বোধ হল। তার মনে শুধু একটাই বাসনা, একটাই কামনা - - তিন্নিকে একঝলক দেখতে পাওয়া। হাতিডোবা আর অলীকপুরের মধ্যে যা শত্রুতা তাতে তাদের ভালবাসাকে ভালচোখে দেখবে এমন মানুষ দুই গ্রামে নেই।
সাহেব ছুটে চলেছে, - হাতে তার তিন সেলের টর্চ। কিছুদূর যাবার পর ব্রিজের কাছে সাহেব থেমে গেল। ব্রিজটি একটা ক্যানেলের উপরে নির্মিত হয়েছে। ব্রিজ পেরিয়েই সাহেবের মনে হল কেউ যেন পাশের ঝোপ হতে তাকে লক্ষ্য করছে। সাহেব রাস্তা হতে একটা আধলা ইঁট তুলে নিয়ে ঝোপের দিকে ছুড়ে মারল। সহসা একটা আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভরে উঠল । পাশের গাছটিতে ঘুমন্ত বকগুলো জেগে উঠে কলরব জুড়ে দিল। কেউ কেউ তো আবার বাঁসা ছেড়ে বেরিয়ে এসে কি ঘটল তার পরীক্ষায় মনোনিবেশ করল।
ঝোপ হতে বেরিয়ে এলেন জগদীশ দারোগা। দারোগাবাবু একটা চোরের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন। পথিমধ্যে গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি হেঁটেই অলীকপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। ব্রিজের কাছে আসতেই পেটটা গুড়গুড় করে ওঠে। তাই রাস্তার পাশের ঝোপেই বসে যান। পেট সাফ হবার আগেই সাহেব দারোগাবাবুর উপর হাত সাফ করে বসে।
দারোগাবাবু শরীরের অর্ধেকটা ঝোপের ভেতর রেখেই উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ওঠেন, " কে রে ! মাই কা লাল হলে এগিয়ে আয়। জগদীশ দারোগার সঙ্গে পাঙ্গা ভারি পড়বে রে হারামি !" আরো যা যা বলল তা শোনার মতো নয়। বিপদ বুঝে সাহেব টর্চ নিভিয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে চলল। পেছনে তখনও জগদীশ দারোগার চিল চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
কিছুটা এগিয়ে যেতেই দারোগাবাবুর গাড়িটা নজরে পড়ল সাহেবের। সাহেব দেখল ড্রাইভার সিটে বসে বসে ঘুমোচ্ছে। ড্রাইভারকে এড়িয়ে যাবার জন্য সাহেব মাঠে নেমে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার রাস্তায় উঠে এল সাহেব। হাতিডোবা গ্রামের শুরুতেই চণ্ডীমণ্ডপ। সাহেব চণ্ডীমণ্ডপের কাছাকাছি যেতেই একটা কাশির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়াল। চণ্ডীমণ্ডপের সামনে বসে থাকা কুকুরগুলোও একসাথে চেঁচাতে লাগল। সাহেব ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে হুশহাশ শব্দ করে কুকুরগুলোকে তাড়াবার চেষ্টা করতে লাগল ।
" কে যায় ? দেখতো সুভাষ, চোর ছ্যাঁচড় কিনা।" রসিকদাদু কাশতে কাশতে উঠে বসেন।
সুভাষখুঁড়ো অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসেন। তারপর মাথার কাছে থাকা তেলচকচকে লাঠিটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। রসিকদাদুও সুভাষখুঁড়োর সঙ্গ নিলেন। এরই মধ্যে অন্যরাও জেগে উঠেছে। সবাইকে একসাথে আসতে দেখে সাহেবের আত্মারাম খাঁচাছাড়া।
No comments:
Post a Comment